বেহালায় পদযাত্রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দমদমে নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ ও বিশ্বনাথ বণিক।
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে দেশ জুড়ে ক্ষোভ ও ধিক্কারের মধ্যেই এ বার শুরু হল মূর্তি গড়ার রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশে প্রচারসভায় বলেন, তাঁর সরকার বিদ্যাসাগর কলেজে ভেঙে দেওয়া মূর্তির জায়গায় পঞ্চধাতুর নতুন মূর্তি করে দেবে। তৎক্ষণাৎ মথুরাপুরের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা জবাব, ‘‘ভিক্ষে চাই না। আমাদের টাকা আছে। বানিয়ে নেব। কিন্তু ওরা ২০০ বছরের হেরিটেজ ফিরিয়ে দিতে পারবে তো?’’
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের মতোই মোদীও অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে ‘তৃণমূলের গুন্ডারা’। মথুরাপুরের সভায় তাঁর আরও অভিযোগ, রাজ্য সরকার প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছে।
প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘তৃণমূল বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে প্রমাণ করতে না পারলে কান ধরে লক্ষ বার ওঠ-বোস করাব। তোমায় জেলে ঢোকাব। আমার কাছে তথ্য আছে, ভিডিয়ো আছে, তোমরা কী ভাবে মূর্তি ভেঙেছ।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কলকাতায় মঙ্গলবার শাহের রোড শো থেকে বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ ওঠে। পর দিন বুধবার ওই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে পাল্টা আঙুল তোলেন শাহ। কিন্তু ওই দিন এ রাজ্যে প্রচারে এলেও মূর্তি ভাঙা প্রসঙ্গে নীরব ছিলেন মোদী। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরপ্রদেশের মউয়ে ভোটপ্রচারে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘অমিত শাহের রোড শোয়ের সময় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে তৃণমূলের গুন্ডারা। যারা এ কাজ করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। বিদ্যাসাগরের মতাদর্শে বিশ্বাস রাখি। তাই তৃণমূলের গুন্ডাদের জবাব দিতে ওই জায়গাতেই বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি তৈরি করবে আমাদের সরকার।’’
আমরা ভিক্ষে চাই না। তোমাদের জন্য একটা কালো মূর্তি বানিয়ে রাখব। সেটা এমার্জেন্সির মূর্তি!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এ দিনই বিকেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে নির্বাচনী সভায় আরও এক ধাপ এগিয়ে মোদী বলেন, ‘‘একটা বন্ধ তালা লাগানো ঘরে রাতে মহান শিক্ষাবিদ সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিয়েছে। ওখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। কিন্তু সরকার যে ভাবে সারদা, নারদের প্রমাণ লোপাট করেছে, সে ভাবেই এ ক্ষেত্রেও প্রমাণ লোপাট করতে লেগে পড়েছে। বোঝা যাচ্ছে, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য দিদি কত দূর যেতে পারেন!’’
মোদীর মূর্তি-মন্তব্যের জবাবে মমতা এ দিন মথুরাপুরের সভায় বলেন, ‘‘মোদীকেই স্ট্যাচু করে দেবে বাংলার জনতা। বাংলার মানুষ তোমাকে জবাব দেবে ভোটের মাধ্যমে।’’ মোদীর বক্তব্য, ‘‘হারের হতাশা দিদিকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। আজ আমাকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন।’’ ডায়মন্ড হারবারের সভায় মমতা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওদের নেতারা এসে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছে।উত্তরপ্রদেশে অম্বেডকর, ত্রিপুরায় মার্ক্স, লেনিনের মূর্তি ভেঙেছিল। আমরা কিন্তু করিনি। গতকাল এসেছিলেন, কিন্তু এক বারও দুঃখপ্রকাশ করেননি। আবার বলছে, মূর্তি বানিয়ে দেবে! এত অহঙ্কার!’’