ছবি: এএফপি।
চারটে দল। একটা শতরঞ্চি। পুরুলিয়ার আড়শার সেনাবনা গ্রামের হরিমন্দির। মন্দিরের থামে কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক, তৃণমূল এবং বিজেপির পতাকা। চাতালে বসেছিলেন চারটি দলেরই কর্মীরা। এক সঙ্গে।
এ সেই সেনাবনা গ্রাম, যেখানে গত ১৮ এপ্রিল উদ্ধার হয় বিজেপি কর্মী শিশুপাল সহিসের দেহ। অপমৃত্যুর জন্য অভিযোগের আঙুল ওঠে শাসক দলের দিকে। যদিও ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ঘটনাটি আত্মহত্যার। তৃণমূলও ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ মানেনি।
তার পরে সেনাবনা থেকে রাজনীতির জল অনেক দূরে গড়িয়েছে। কিন্তু হরিমন্দিরের চাতালে বসে রবিবার, ভোটের দিন বিজেপি সমর্থক বিলাসচন্দ্র মাহাতো, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ গৌরচন্দ্র মাহাতোরা বলছিলেন, ‘‘আমরা চিরকাল মিলেমিশেই থাকি। লড়াই শুধু ভোটের যন্ত্রে। এখানে চার দলের লোক আছে। যে দলের প্রার্থীই জিতুন, তিনি বাকি সবারও প্রতিনিধি হবেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত পঞ্চায়েত ভোটের পরে, পুরুলিয়ার বলরামপুরে আরও দুই বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ৩০ মে সুপুরডি গ্রামের ত্রিলোচন মাহাতোর। ২ জুন ডাভা গ্রামের দুলাল কুমারের। সুপুরডিতে ঢোকার মুখেই দেখা গেল, নিম গাছের নীচে বিজেপির ক্যাম্প। রাস্তার বাঁক পেরিয়ে তৃণমূলের। দুপুর ২টো। ত্রিলোচনের বাবা হাড়িরাম মাহাতো স্ত্রী পানো মাহাতোর সঙ্গে ভোট দিতে বেরোচ্ছিলেন। পানোদেবীর চোখে জল। বলছিলেন, ‘‘ছেলেটা গত পঞ্চায়েতে প্রথম বার ভোট দিয়েছিল। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে।’’
পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে বাবার সঙ্গে বুথে গিয়েছিল বছর পাঁচেকের আদর্শ। এ দিন সকালেও মা আর ঠাকুরদার সঙ্গে সে গিয়েছিল বুথে। সে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন আদর্শর মা, দুলাল কুমারের স্ত্রী মণিকা। বলরামপুর থেকে বাঘমুণ্ডি যাওয়ার পথে ডাভা গ্রামের গোপলাডি মোড়ের যে চালায় আড্ডা দিতেন দুলাল সেখানেই এ বার বিজেপির শিবির। দুলালের ভাই কৃষ্ণ কুমার বললেন, ‘‘দাদা খুন হওয়ার পরে আরও দশটা দুলাল জন্মেছে। এ বার বিরাট ভোটে জিতব আমরা।’’ উল্টো দিকে তৃণমূলের শিবিরে বসে স্থানীয় নেতা মহাদেব কুমারও দাবি করলেন, ‘‘এই বুথ তৃণমূলকে লিড দেবে।’’
সকালে সেনাবনায় ঢোকার মুখে হরিমন্দিরের জটলার কথা শুনে চমকে উঠলেন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বীরসিংহ মাহাতো। পরে তিনি বলেন, ‘‘এটাই এ জেলার পরম্পরা। এ ভাবেই সম্প্রীতি রক্ষা করা দরকার।’’ এ দিন স্ত্রী এবং মাকে নিয়ে ভোট দিয়ে এসেছেন শিশুপালের বাবা, স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য যাদব সহিস। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘ভোটই আমাদের প্রতিবাদ।’’ প্রতিবাদটুকু বাদে, বাকি ছবি সহাবস্থানের। সেনাবনার কংগ্রেস সমর্থক গোপাল কালিন্দী, ফব-কর্মী হরেন মাহাতোদের কথায়, ‘‘ভোট মিটলে গ্রামেই থাকতে হবে। বাইরের লোক অনেক কথা বলবে। তাতে কান দিলে জীবন চলবে না।’’