স্ত্রীর সঙ্গে অর্ণব রায়। ছবি: সংগৃহীত
নদিয়ায় ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে থাকা নোডাল অফিসার অর্ণব রায়ের অন্তর্ধানে যতটা ‘রহস্য’ তৈরি হয়েছিল। অর্ণবের প্রত্যাবর্তনেও ততটাই ‘রহস্য’ থেকে গেল। কাজের চাপে তিনি হাওড়া স্টেশন চত্বরে ‘আত্মগোপন’ করেছিলেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে জানিয়েছেন।
কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যেও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভবানীভবনে অর্ণববাবুর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন গোয়েন্দারা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অনীশা যশও। সিআইডি-র দাবি, গত সাত দিন ধরে তিনি নাকি হাওড়া স্টেশন চত্বরের আশেপাশেই ছিলেন বলে জানিয়েছেন অর্ণব। এমন কি তিনি ৯ এবং ১১ নম্বর প্ল্যাটফর্মেও তিনি রাত কাটিয়েছেন।
এক জন ডব্লুবিসিএস অফিসারের সঙ্গে এমনকি ঘটনা ঘটল, যে তাঁকে স্টেশনে আত্মগোপন করতে হল? এই প্রশ্নের জবাবে তাঁর যুক্তি, ‘‘আমি কাজের চাপ সামলাতে পারছিলাম না।’’ তিনি সঠিক তথ্য দিচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে সিআইডি।
গোয়েন্দাদের আর একটি বিষয়ও ভাবাচ্ছে, অর্ণব কি কিছু গোপন করছেন? কাজের যদি চাপই থাকবে, সেই চাপ কাটাতে কেন স্টেশন চত্বরকে বেছে নিতে গেলেন? তা-হলে কি, এই ‘আত্মগোপন’-এর নেপথ্যে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে? এই সব প্রশ্নের ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশনস) নিশাত পারভেজ বলেন, “অর্ণব রায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি যা বলছেন, তা শুনলাম। পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করা হবে।”
এ দিন সকালে সিআইডি-র একটি দল তাঁকে হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করে। এর পর তাঁকে হাওড়ায় কাজিপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আনা হয় ভবানীভবনে। সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অত্যন্ত গোপনীয়তা রাখা হয়েছিল। এই সময়ে অর্ণব বা তাঁর স্ত্রীকে মিডিয়ার থেকে দূরে রাখা হয়।
আরও পড়ুন: মোদীর বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের নালিশ, সমাধান না করেই কমিশনের ঘোষণায় বিভ্রান্তি
১৮ এপ্রিল কৃষ্ণনগরের পলিটেকনিক কলেজের সামনে থেকে নিখোঁজ হয়ে যান অর্ণব। এই নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে, মানিসক অবসাদ এবং ভোট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করা হচ্ছিল। এর পরই অনীশা যশ বলেন, ‘‘অর্ণবের কোনও মানসিক সমস্যা নেই।’’
টানাপড়েনের মধ্যে গত সাত দিন ধরে সিআইডি-র পাশাপাশি নদিয়া জেলার পুলিশও তাঁর নিখোঁজ তল্লাশি চালাচ্ছিল। অবশেষে এ দিন ফোনের টাওয়ার লোকেশনই অর্ণবের খোঁজ দিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএসপি নির্মল যশ সম্পর্কে অর্ণবের শ্বশুর। তিনিও এ দিন ঘটনা জানার পর কাজে বেরিয়ে যান। বাড়ির দরজা বন্ধ ছিল। কোনও সদস্যই মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের পর ভবানীভবন তিনি গোপনে বেরিয়ে যান। কেন এত গোপনীয়তা, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে! সাত দিন ধরে হাওড়া স্টেশন চত্বরেই যদি থেকে থাকেন অর্ণব, তা হলে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, নদিয়া জেলা পুলিশ, তাঁর খোঁজ পেলেন না কেন? উঠছে প্রশ্ন।
কমিশন সূত্রে খবর, ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অর্ণব রায়কে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নিলেন কৃষ্ণনগরের ডেপুটি কালেক্টর নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য।