Lok Sabha Election 2019

শেষ দফার ভোট ছ’মাস বন্ধ রাখতে চেয়েছিলেন বিশেষ পর্যবেক্ষকরা

১৪ মে রাতে বিজেপি সভাপতির রোড শো ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়। বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙা হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি। অভিযোগের আঙুল ওঠে বিজেপি কর্মীদের দিকে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০৪:১৩
Share:

বিবেক দুবে (বাঁ-দিকে) ও অজয় নায়েক। ফাইল চিত্র

গত মঙ্গলবার রাতে উত্তর কলকাতায় অমিত শাহের রোড-শো ঘিরে গোলমালের পরে রাজ্যের বাকি ৯টি লোকসভা কেন্দ্রের ভোট ছ’মাসের জন্য স্থগিত করে দিতে চেয়েছিলেন দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক এবং বিবেক দুবে। সূত্রের খবর, কমিশনের অন্দরে পরিস্থিতি এতটাই ঘোরাল হয়ে উঠেছিল, যে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে ‘বার্তা’ পাঠান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার কাছে।

Advertisement

১৪ মে রাতে বিজেপি সভাপতির রোড শো ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়। বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙা হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি। অভিযোগের আঙুল ওঠে বিজেপি কর্মীদের দিকে। পরের দিন সকালে দিল্লি ফিরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অমিত। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধি দল অরোরার সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা ও দুই বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবের বিরুদ্ধে সরব হন।

তার পরেই অন্য দুই কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বসেন অরোরা। কলকাতা থেকে যোগ দেন অজয় নায়েক, বিবেক দুবে এবং আরিজ আফতাব। বৈঠকের শুরুতেই অরোরা দুই পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। নির্বাচন সদনের বক্তব্য ছিল, ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য তাঁদের পাঠানো হয়েছে। অথচ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাঁদের বিরুদ্ধেই কথা বলে যাচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন করা হয়, শেষ দফার ভোট অবাধ হবে কি না? যা শুনে অজয় জানান, প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। তার পরেও শান্তিতে ভোট হবে তা হলফ করে বলতে পারবেন না তিনি। এই অবস্থায় ছ’মাস ভোট স্থগিত করার পরামর্শ দেন দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এখন প্রশ্ন হল, গত ছ’দফা নির্বাচনে এ রাজ্যের বিরোধী দলগুলি হিংসা এবং রিগিংয়ের বিস্তর অভিযোগ জানালেও, এমনকী প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ভোট ‘খুবই শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে বলে দাবি করেছিল নির্বাচন কমিশন। ভোট লুটের কারণে কোনও বুথে পুনর্নিবার্চনের নির্দেশ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। তা হলে শেষ দফায় এসে এমন কী হল যে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেন দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক।

কমিশনের একটি সূত্রের মতে, শাহের অভিযোগের পরে কমিশনের ফুল বেঞ্চ সিইও এবং দুই পর্যবেক্ষকেই দোষারোপ করেছিল। ভোট স্থগিতের পরামর্শ এবং দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাওয়ার ইচ্ছা তারই প্রতিক্রিয়া।

কমিশনের অন্য অংশ কিন্তু বলছে, কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশের একাংশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে না। তাই ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছে। কুইক রেসপন্স টিম পাঠিয়ে অবস্থা সামলানো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তো এমন অভিযোগ আসারই কথা নয়। ফলে ১৯ তারিখ যে এর পুনরাবৃত্তি হবে না, তা জোর দিয়ে বলা অসম্ভব। তবে ভোট স্থগিতের প্রস্তাব শুনে তিন কমিশনরাই কিছুটা থমকে যান বলে কমিশন সূত্রে খবর। এর পরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।

পরামর্শ নেওয়া হয় রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপনির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত না-করে সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে এক দিন আগেই প্রচার শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নায়েক এবং দুবেরও মতামত নেয় কমিশন। দুই পর্যবেক্ষক জানান, দু’টি বিশেষ রিপোর্ট পাঠাতে চান তাঁরা। বুধবার বিকেল তিনটে নাগাদ অত্রি ভট্টাচার্য এবং রাজীব কুমার সম্পর্কে রিপোর্ট যায়। সন্ধ্যাতেই প্রচারের সময় ছাঁটার পাশাপাশি তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে কমিশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন