প্রচারের-মঞ্চ: ইটাহারে তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের সভা। মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী, অমল আচার্য ও বিপ্লব মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী ধরে নিয়ে তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দিতে আবেদন করলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
কেন এই আবেদন করলেন শুভেন্দু? মঙ্গলবার ইটাহার হাইস্কুলের মাঠে শুভেন্দুর এই আবেদন দলের প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ সামাল দিতেই তাঁর এই বক্তব্য বলে মনে করছেন তৃণমূলেরই কিছু নেতা। দলেরই একাংশ জানান, গত লোকসভা নির্বাচনে জেতার পরে পাঁচ বছরে গোটা তিনটে দিনও অর্পিতাকে ইটাহারে দেখা যায়নি বলে দলেরই কিছু নেতার দাবি। তা ছাড়া, অভিযোগ, ২০১৭ সালে বন্যায় ইটাহারের বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, গবাদি পশু মারা গেলেও সাংসদকে কাছে পাননি বাসিন্দারা। সেই ক্ষোভের কথা পরিবহণমন্ত্রীর কানে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী ধরে নিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীকে ভোট দিন।’’
এই বিধানসভা এলাকা থেকে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন বালুরঘাট কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ অর্পিতা। এখন সেই ভোট ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছে তৃণমূলের কাছে। তার উপর বিজেপি আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক টেনে এই বিধানসভা এলাকায় মাথা তুলে দাড়িয়েছে পঞ্চায়েতে ভোটেও। এ দিন অর্পিতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন কারণে ইটাহারে আসতে পারিনি। ছয় মাস দিল্লিতে থাকতে হয়। তবে আবার সাংসদ হলে ইটাহারবাসী বারবার আমাকে দেখতে পাবেন।’’ কখনও বলেন, ‘‘প্রার্থী গুরুত্বপূর্ণ নয়। দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) হাত শক্ত করতে জোড়া ফুলে ভোট দিন।’’
যা শুনে বিজেপি নেতারা পাল্টা প্রচার করছেন। বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি নির্মল দাম বলেন, ‘‘মানুষ দুর্দিনে সাংসদকে পাশে পাননি। এখন ওসব বলে কোনও লাভ নেই।’’ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যের খাসতালুকেই বিজেপি দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে। সার্বিক ভাবে এই ব্লকে ৪০ শতাংশের উপরে ভোট ব্যাঙ্ক তারা টেনেছে। তার মধ্যে আদিবাসী ভোটের একটা বড় অংশ তাদের পক্ষে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আদিবাসী ভোট টানতে এ দিন পরিবহণমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, সাঁওতালি ভাষায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পড়াশোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসী থানা থেকে কবরস্থান, শ্মশান সংস্কারে প্রকল্প চালু করেছেন। বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৬০ কোটি টাকা রাজ্য সরকার এই জেলার জন্য বরাদ্দ করেছে।
এ দিন চাকুলিয়ার মনিরুল উলুম হাই মাদ্রাসের মাঠেই ওই কর্মিসভায় দাড়িভিট প্রসঙ্গ নিয়েই ইসলামপুরের গণ্ডগোলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শুভেন্দু। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ইসলামপুর শহরের বেশ কিছু সরকারি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু বলেন, ‘‘নির্বাচন এসেছে বলেই বিজেপি, আরএসএস দাড়িভিট নিয়ে ইসলামপুরের হিংসাত্মক কাজ করেছে। তারা বেশ কিছু বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপি এলে ফের আগুন জ্বলবে।’’
যদিও বিজেপির দাবি, দাড়িভিট নিয়ে ধর্মঘটের দিন বাস বিজেপির লোকেরা পুড়ায়নি. মুখে কালো কাপড় বেধে তৃণমূলের লোকেরাই পুড়িয়েছে. উল্টে সেই ধর্মঘটের দিন দোকান বন্ধ রাখায় ইসলামপুরে ব্যবসায়ীদের দোকানে ঢিল ছুড়েছে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগারওয়াল ও মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারির সামনে।
তবে কানাইয়ালাল সম্পর্কে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে মিশে চলেন এমন প্রার্থী পেয়েছেন এলাকার মানুষ। তিনি এর আগে ইসলামপুরের মানুষের জন্য কাজ করেছেন।’’ ২০ বছরে এলাকার লোক রায়গঞ্জের লোকসভা কেন্দ্রের কোনও প্রার্থী পাননি। সাংসদের দেওয়া সার্টিফিকেটে চিকিৎসা, জরুরি পরিষেবার টিকিট অনেক কিছুই মেলে। এমনকি সাংসদ তহবিলের টাকায় অনেক উন্নয়ন সম্ভব বলেই দাবি তার।