হুডখোলা গাড়িতে কল্যাণ। —নিজস্ব চিত্র।
তখনও অনেকের ঘুম ভাঙেনি। রাস্তায় অন্তত ২০টি ঢাকের আওয়াজ!
রবিবার ভোর হতেই ভোটারদের দরজায় কড়া নাড়লেন শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কাউকে দেখে হাত নাড়লেন, কোনও বৃদ্ধকে দেখে হাতজোড় করে প্রণাম জানালেন।
তৃণমূল এ দিন সকালে পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছিল উত্তরপাড়া কোতরং-এ ধাড়সা মোড়ে জিটি রোড থেকে টানা কোন্নগর স্টেশন। সেখান থেকে ক্রাইপার রোড হয়ে ফের জিটি রোড। পদযাত্রা যতই এগিয়েছে, ভিড় ততই বেড়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বেশিরভাগ রাস্তা হেঁটেই ঘুরেছেন কল্যাণবাবু। সকাল থেকে চড়া রোদ আর ভ্যাপসা গরম ছিল। ফলে, প্রার্থীর ‘ভোট ম্যানেজার’ উত্তরপাড়া পুরপ্রধান দিলীপ যাদব থেকে বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল— সকলে ঘেমে-নেয়ে একসা। কোন্নগর স্টেশন রোডে ঢাকের আওয়াজে রবিবারের বাজারমুখী মানুষ
থমকে দাঁড়িয়েছেন। ক্রাইপার রোড এলাকার বাসিন্দা তিমির রায় বলেন, ‘‘সকালে পথে বের হয়ে মনে হল ভোট এসে গেল। কেমন একটা উৎসব-উৎসব ভাব।’’
বিকেলে ধাড়সা থেকে জিটি রোড হয়ে হিন্দমোটর-নন্দনকানন, তারপর উত্তরপাড়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত পদযাত্রা আসে। রোদ না-থাকায় বিকেলে আরও ভিড় ছিল ওই পদযাত্রায়। এক ফাঁকে হিন্দমোটর ফ্রেন্ডস্ ইউনিয়ন মাঠে ছেলেমেয়েদের ভলিবল খেলতে দেখে ভলিবল খেলতেও নেমে যান তৃণমূল প্রার্থী। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘আমি সারা বছরই মানুষের সঙ্গে থাকি। তবুও ভোটের সময় মানুষের কাছে পৌঁছনোর একটা বাড়তি আর্তি থাকেই। মানুষের সমস্যার কথা শুনি।’’
ছুটির দিনে প্রচারে নেমেছিলেন হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। এ দিন লকেট ছিলেন পান্ডুয়ায়। দুপুরে পান্ডুয়া মেলাতলায় জিটি রোডের ধারে একটি প্রেক্ষাগৃহে কর্মিসভা করেন। লকেট বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে ওরা আমাদের কর্মীদের উপরে অত্যাচার চালিয়েছিল।
এ বার তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য সবাইকে তৈরি থাকতে হবে। মহিলাদের বাহিনী গঠন করতে হবে। পুলিশ-প্রশাসন শাসক দলের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করলে সেই সন্ত্রাস প্রতিহত করতে আমাদের কর্মীরাও প্রস্তুত।’’
হুগলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী না-আসার পিছনে জেলা প্রশাসনকেই দায়ী করেন লকেট।
কর্মিসভা সেরে লকেট বেলা আড়াইটে নাগাদ পান্ডুয়ার বাগ ময়দানে সঞ্জিৎ মুর্মু নামে দলের এক অদিবাসী কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। মেনুতে ছিল ভাত-ডাল, আনাজ, কাতলা মাছের ঝোল আর চাটনি। সঙ্গে ছিলেন দলের হুগলির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবীর নাগ। খাওয়া সেরে লকেট বলেন, ‘‘সঞ্জিৎ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমুলের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর বাঁ চোখে আঘাত লাগে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। বাঁ চোখে কিছু দেখতে পান না। তৃণমূলের অত্যাচার আমাদের প্রতিহত করতেই হবে।’’ সঞ্জিৎ বলেন, ‘‘লকেটদি আমাদের মতো গরিবের ঘরে ভাত খাবেন, ভাবতেই পারিনি।’’ বিকেলে মেলাতলা থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত পদযাত্রা করেন লকেট।