এই ছবি ঘিরেই বিতর্ক।
মাথায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টুপি। হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল। চোখে রোদচশমা। বেশ কায়দা করে দাঁড়িয়ে তোলা সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেই একেবারে হইহই কাণ্ড! ‘লাইক’, ‘ওয়াও’ তো বটেই, বানের জলের মতো ঢুকতে শুরু করে ‘কমেন্ট’ও।
অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার ফোনও করে বসে, ‘‘তোর কী সাহস রে! কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখলেই তো আমাদের গলা শুকিয়ে যায়। আর তুই কি না এক্কেবারে ওদের মেশিন নিয়ে ছবি তুললি?’’
শুধু ‘মেশিন’ নিয়েই নয়, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া এলাকার জনাকয়েক যুবক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি নিজস্বীও তুলে পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আর সেই ছবি নজরে আসতেই শুরু হয় বিপত্তি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর টুপি পরে, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছবি তোলার ঘটনায় বিএসএফের আইজি-র রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার এ রাজ্যের ভোটে বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে বলেন, ‘‘আমি ছবিগুলি দেখেছি। বিএসএফের আইজি-কে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি।’’
পুলিশ ও কমিশনের একাংশ মনে করছে, অপরিচিত লোকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া বড় বিপদ ঘটাতে পারে। সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মে এটা শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল।
কমিশনের খবর, বিএসএফের আইজি এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। ফলে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তাঁরই।
পুলিশের একটি সূত্রের মতে, রাজ্যে নিরপেক্ষ ভোট করানোর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে এ ভাবে মিশলে এবং তাঁদের টুপি, বন্দুক নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ছবি তুললে জনমানসে ভিন্ন ধারণা হতে পারে। শুধু তাই নয়, ভোটে কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে।
তবে ছবি নিয়ে প্রশাসনের লোকজন খোঁজখবর করতেই ফেসবুক থেকে সব ছবি মুছে দিয়েছেন হরিহরপাড়ার কাইজার মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘খামারমাটি জুনিয়র হাইস্কুলের বুথে এসেছিল ওই জওয়ানেরা। আমাদের কয়েক জনের সঙ্গে তাদের আলাপও হয়। তার পরে ছবিও তুলি।’’
পেশায় ট্রাক্টর চালক কাইজারের দাবি, ‘‘ওই জওয়ানদের অনুমতি নিয়েই ওদের টুপি পরে, মেশিন হাতে ছবি তুলেছি। এ জিনিস প্রথম হাতে নিলাম! তবে ফেসবুকে জওয়ানেরাই ছবি পোস্ট করে আমাকে ট্যাগ করে। কিন্তু আমি ভয় পেয়ে সে সব ছবি মুছেও দিয়েছি।’’
আর স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, ‘‘এ সব ছেলেপুলের সাহসও বলিহারি! জওয়ানেরা আসা ইস্তক এলাকার কয়েক জন ওদের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করছিল। তাই বলে ওদেরই বন্দুক নিয়ে ছবি তুলবে! এ সব করতে গিয়ে যদি গুলি-টুলি বেরিয়ে যেত!’’