প্রতীকী চিত্র।
হুমকি-শাসানির অভিযোগ কার্যত নেই!
অস্ত্রের আস্ফালন নেই!
রক্তপাত, বুথ জ্যাম, রিগিং, ছাপ্পা ভোটের চেনা ছবিটাও উধাও!
প্রায় দু’দশক পরে নিজের ভোট নিজে দিতে পারলেন খানাকুলের জগৎপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্মল রায়। সোমবার ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ রকমই ভোট হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ। আগে কতবার ভোট দিতে এসে শুনেছি, আমার ভোট পড়ে গিয়েছে। দু’-একবার তো ভোট দিতে নিষেধই করা হয়েছিল।’’
প্রায় একই সুর পুরশুড়ার প্রৌঢ়া বিমলা ভক্তরও। পুরশুড়া উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল তাঁর বুথ। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ নির্বিঘ্নেই ভোট দেন তিনি। প্রৌঢ়া খুশি, ‘‘এত দিন ভোটে গ্রামের ছেলেরা ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে হুমকি দিয়েছে, ভোটটা ঠিক করে দেবে কাকি। তার পর নিজেরাই দিয়ে দিয়েছে। এ বার নিজেই ভোট দিয়েছি। কাউকে ঘেঁষতে দেননি জওয়ানরা।”
নির্মলবাবু বা বিমলাদেবীর মতোই এ দিন উৎসবের মেজাজে ভোট দিলেন আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটাররা। এক ব্যতিক্রমী ‘শান্তির ভোট’ দেখল আরামবাগ। সেই আরামবাগ, যেখানে ভোট আর সন্ত্রাস সমার্থক হয়ে গিয়েছিল বহু বছর আগেই। এ বার এই শান্তির আবহ বজায় রাখার জন্য কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন ভোটাররা। আর আক্ষেপের সুর শোনা যাচ্ছে রাজ্যের শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের মুখে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরান্ডির এক তৃণমূল নেতার চিন্তা, ‘‘দলের উপর মহল বলেছিল, দুপুর ১২টার পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপট থাকবে না। নির্বিঘ্নে ভোট করানো যাবে। কিন্তু কোথায় কী? এ বার কেলেঙ্কারি হবে মনে হচ্ছে।” নৈসরাইয়ে তৃণমূলের এক যুবনেতা বিভ্রান্ত, ‘‘কমিশনের মতিগতি বোঝা যাচ্ছে না। গত লোকসভা ভোটে আমি একাই ২০টা ভোট দিয়েছি। বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটে আরও বেশি। ব্লকের নেতারা এসে ধন্য ধন্য করেছে। এ বার কী হবে! কিছুই পারিনি।”
যদিও ওই সব নেতাদের আক্ষেপকে গ্রাহ্য করছেন না তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের ভোট-ম্যানেজাররা। দলের আরামবাগের ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দীর দাবি, ‘‘আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় আমাদের ভোট কমবে না।’’ গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের দাবি, ‘‘এখানে দল অন্তত ৩০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকবে।”
কিন্তু ‘খেলা’ অত সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে, এ বার মানুষ নিজের ভোট নিজে দিয়েছেন। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও যা সম্ভব হয়নি। তাই অনেক সমীকরণ পাল্টে যাবে। বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘কমিশনের তৎপরতাতেই আরামবাগ অন্য ভোট দেখল।’’ সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কমিশন অনেকটা চেষ্টা করেছে। সফলও হয়েছে।’’ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রভাত ভট্টাচার্য মনে করছেন, গত বছর কুড়ির মধ্যে এমন সার্বিক শান্তির ভোট দেখা যায়নি। সিপিএমের প্রয়াত অনিল বসুর আমল থেকে ভোটের দিন সন্ত্রাস ‘ট্র্যাডিশন’ হয়ে গিয়েছিল। এ বার তাতে ছেদ পড়ল।