এভাবেই জঙ্গিপুরে সেতুর নীচে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
সেতু রাখি না দোকান!
সেতু বাঁচাতে গেলে সরাতে হবে তার তলায় বেআইনি ভাবে গেঁড়ে বসা কয়েকশো দোকান— এমনই নিদান পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত করছে কে!
স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, দোকানের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। সেতুর নীচে গড়ে ওঠা কাপড়, কাঠ, মনোহারি কিংবা মাংসের দোকানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থিকথিক করছে ভিড়।
১৯৯৬ সালে সেতুর কাজ শুরু করে গ্যামন ইন্ডিয়া লিমিটেড। সেই সময় সেই কাজের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন পূর্ত দফতরের জঙ্গিপুরের বর্তমান সহকারি ইঞ্জিনিয়ার নির্মলকুমার মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘সেতুর নীচে কয়েকশো দোকান। সারা বাংলায় কোথাও এমন নজির নেই। ব্যবসায়ীরা যাতে সেতুর তলা থেকে দোকান সরিয়ে নেন সে ব্যাপারে বহু বার পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু দোকান সরানো যায়নি।’’
দোকান থাকলে কী বিপদ হতে পারে?
নির্মলবাবু জানাচ্ছেন, দোকানগুলির ছাদ ঠেকে রয়েছে সেতুর সঙ্গে। ফলে ‘হাইড্রোলিক’ পদ্ধতি ঠিক মত কাজ করছে না। সেতুর উপর থেকে জল বার হওয়ার জন্য যে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল সেগুলোও অকেজো হয়ে পড়েছে। তাই সেতুর উপরের জল জমে থেকে ক্ষতি করছে নির্মাণের। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘অবিলম্বে দোকান না সরালে বিপদ অনিবার্য।’’
সে বিপদও এক বার টেরও পেয়েছে জঙ্গিপুর-রঘুনাথগঞ্জ। ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে জঙ্গিপুরে সেতুর নীচের ১৩টি দোকানে আগুন লাগে। সেতুর তিনটি পিলারের উপরে বসানো ছ’টি বিয়ারিং পুড়ে যায়। নষ্ট হয় একাধিক গার্ডার। কলকাতা থেকে ছুটে আসেন পূর্ত দফতরে বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদরা। দু’দিন সেতু বন্ধ রেখে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ারিং বদলানো হয়। তার পরেই সেতুর নীচের দোকান সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই! দোকান যেমন ছিল, তেমনই আছে।
এ দিকে, শিয়রে বিপদ জেনেও দোকান কে সরাবে তা নিয়ে চাপান-উতোর চলছে পূর্ত দফতর ও পুরসভার মধ্যে। পূর্ত দফতর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অবিলম্বে সেতুর নীচের ওই দোকান সরাতে হবে। নইলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদের মুখে পড়তে পারে ভাগীরথীর উপর জঙ্গিপুর সেতু।
পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের অভিযোগ, সেতুর নীচে ওই দোকানগুলোর ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দিয়েছে জঙ্গিপুর পুরসভা। সেতুর ক্ষতি হবে জেনেও সেখানে ব্যবসা করতে কী ভাবে লাইসেন্স দিল পুরসভা? যা শুনে জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “সেতু বাঁচাতে নীচের জবরদখল তুলতে হবে পূর্ত দফতরকেই। পুরসভা তাদের সাহায্য করবে। কে, কারা, কবে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দিয়েছে সেটা কোনও বিষয় নয়।”
২০০১ সালের ডিসেম্বরে জঙ্গিপুরে ভাগীরথীর উপর ১১৬০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি গড়ে তোলে রাজ্য সরকার। গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু জঙ্গিপুর, লালগোলা, জিয়াগঞ্জ, লালবাগ, বহরমপুরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। দৈনিক এই সেতু দিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ছোট ও ভারী যানবাহন যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দায় ঠেলাঠেলি না করে দোকানদারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।