তদন্তের শেষ কবে, প্রশ্ন মদনের কৌঁসুলির

কলকাতা হাইকোর্ট বা নিম্ন আদালত, কোথাও জামিন মেলেনি। এই অবস্থায় মন্ত্রী মদন মিত্রের তরফে আদালতে জানতে চাওয়া হল, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত ঠিক কত দিনে শেষ করবে সিবিআই?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

কলকাতা হাইকোর্ট বা নিম্ন আদালত, কোথাও জামিন মেলেনি। এই অবস্থায় মন্ত্রী মদন মিত্রের তরফে আদালতে জানতে চাওয়া হল, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত ঠিক কত দিনে শেষ করবে সিবিআই?

Advertisement

এই মুহূর্তে তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেই ব্যাপারে সিবিআইয়ের কাছে একটি রিপোর্ট চাওয়ার জন্য শুক্রবার আলিপুর আদালতে আবেদন জানান মদনবাবুর আইনজীবীরা। সেই সঙ্গেই তাঁদের আর্জি, তদন্তের সময়সীমা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হোক ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। এই আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা নথিপত্র জমা দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে সময় চেয়েছে সিবিআই। ১৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে।

সারদা মামলায় গত ১২ ডিসেম্বর ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবুকে গ্রেফতার করে সিবিআই। লৌহকপাটের আড়ালে কিছু দিন কাটানোর পরে অসুস্থতার কারণে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন। তার পর থেকে এখনও ওই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডেই আছেন তিনি। সারদা রিয়েলটি মামলার মূল শুনানি চলছে আলিপুরে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম)-এর আদালতে।

Advertisement

মদনবাবুর আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র ও বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এ দিন আদালতে জানান, তাঁদের মক্কেল ন’মাস ধরে জেলে বন্দি। তাঁকে একাধিক বার জেরা করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে চার্জশিটও দিয়েছেন তদন্তকারীরা। তা সত্ত্বেও মদনবাবু জামিন পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় তদন্ত শেষ করতে আর কত দিন লাগবে, সিবিআই সেটা জানাক। বৈশ্বানরবাবু বিচারককে বলেন, ‘‘এই তদন্ত এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে, দয়া করে সেই ব্যাপারে একটি রিপোর্ট চান।’’

সিবিআইয়ের কৌঁসুলি পার্থসারথি দত্ত জানান, সারদা তদন্ত শেষ করার সময়সীমা জানতে চেয়ে এর আগে সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালত সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। তদন্ত কত দূর এগিয়েছে, সেই ব্যাপারে নথিপত্র জমা দেওয়ার জন্য কয়েক দিন সময় চান তিনি। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পরে আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সৌগত ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, ১৪ তারিখে তিনি ফের মামলাটি শুনবেন।

সারদা মামলায় সিবিআইয়ের দাখিল করা চার্জশিটের প্রতিলিপি চেয়ে এ দিন ওই আদালতেই আবেদন জানান সারদা মামলায় আর এক অভিযুক্ত অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বার আইনজীবীরা। বুম্বার আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানান, বারবার বলা সত্ত্বেও সিবিআই চার্জশিটের প্রতিলিপি দিচ্ছে না। ৯ সেপ্টেম্বর আলিপুর জেলা আদালতে তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদনের শুনানি রয়েছে। তার আগে ওই প্রতিলিপি পেলে তাঁর সুবিধা হবে বলে জানান অনির্বাণ। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিবিআই-কে চার্জশিটের প্রতিলিপি দিতে হবে ওই অভিযুক্তের আইনজীবীকে।

টাওয়ারের সম্পত্তি

অর্থ লগ্নি গোষ্ঠী টাওয়ার-এর একটি সম্পত্তি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ দিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, বাঁকুড়ায় টাওয়ার গোষ্ঠীর সম্পত্তি বিক্রির জন্য দু’টি প্রথম সারির সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তার ভিত্তিতে ৩০ সেপ্টেম্বর ওই সম্পত্তি নিলাম করা হবে। হাইকোর্টের তরফে নিলামে নজরদারি করা হবে।

বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার সম্পত্তি রাজ্য না কেন্দ্র, কার দখলে থাকবে, তা নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। সেই জটিলতায় এর আগে একটি সম্পত্তি বিক্রির নির্দেশের প্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আদালতে দাবি করেছিল, ওই সব সম্পত্তি দখল ও বিক্রির অধিকার আছে তাদের। এ দিন এই জটিলতা কাটিয়ে কী ভাবে সম্পত্তি বিক্রি করা যায়, সেই ব্যাপারে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে হাইকোর্ট। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে তা দেওয়া হয়েছে। তারা সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখে আদালতকে জানাবে।

সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরাতে প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে কমিশন গড়েছিল রাজ্য সরকার। সেন কমিশনের মেয়াদ ফুরিয়েছে। কিন্তু কমিশনের রিপোর্টের কী হল, এ দিন আদালতে সেই প্রশ্ন ওঠে। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই ব্যাপারে ১৬ সেপ্টেম্বর শুনানি হবে।

হানা রাজ্যে রাজ্যে

সিবিআই-কে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের নির্দেশ দিতে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালত অন্যান্য বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাকেও তদন্তের আওতায় আনতে বলেছিল। এ দিনই বেসিল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি লগ্নি সংস্থার বিভিন্ন দফতর ও কর্মকর্তাদের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছ’টি রাজ্যে ৫৮টি জায়গায় অভিযান চালানো হয়। এ রাজ্যে তল্লাশি চলে প্রায় ২৯টি জায়গায়। সিবিআই সূত্রের খবর, সিকিওরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি ২০১৩ সালে নির্দেশ দিয়েছিল, ওই সংস্থা বাজার থেকে টাকা তুলতে পারবে না। তবু বেসিল ইন্টারন্যাশনাল বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন