মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার শুনানি কলকাতাতেই হবে। সর্বোচ্চ আদালতে মোর্চা নেতা রোশন গিরি আবেদন করেছিলেন, এই মামলা সিকিমে বা অন্য কোনও রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। কিন্তু আজ সেই আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
রোশন গিরিদের যুক্তি ছিল, একে তো দার্জিলিং থেকে কলকাতায় আসতে অনেকটা সময় লাগে। তার উপর কলকাতায় শুনানি হলে প্রাণহানির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, অন্য মামলায় রাজ্য পুলিশ গ্রেফতারও করে দিতে পারে। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের কিন্তু বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে ও বিচারপতি নাগেশ্বর রাওয়ের বেঞ্চের মতে, প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি করা যেতে পারে। কিন্তু মামলা সরানো হবে না। আর সংশ্লিষ্ট আদালত যদি মনে করে, তা হলে অভিযুক্ত বা সাক্ষীকে সশরীর হাজিরা দিতে হবে। তবে তার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে।
এই ঘটনায় মোর্চার অন্দরে উদ্বেগ বেড়েছে। দল সূত্রের খবর, এমনিতেই পাহাড়ে পুলিশ পুরনো মামলায় অভিযুক্তদের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের সৌজন্যে চলা অবৈতনিক স্কুলের দখল নিয়ে সেখানে ক্যাম্প করেছে আধা সামরিক বাহিনী। প্রায় ৫ দিন ধরে বিমল গুরুঙ্গ দার্জিলিঙের পাতলেবাসের আস্তানা ছেড়ে পাহাড়ি চা বাগানের প্রত্যন্ত এলাকায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, তামাঙ্গ হত্যা মামলায় বিচার শুরু হলে গুরুঙ্গ-সহ চার্জশিটে নাম থাকা সকলকে কলকাতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তাই আপাতত জনসমক্ষে আসতে চাইছেন না গুরুঙ্গ।
২০১০ সালের ২১ মে গোর্খা লিগ সভাপতি মদন তামাঙ্গকে সভাস্থলে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সেই মামলায় গুরুঙ্গ, আশা গুরুঙ্গ, রোশন গিরি সমেত মোর্চার প্রথম সারির নেতানেত্রীরা অভিযুক্ত। চার্জশিটে তাঁদের নামও রয়েছে। এই মুহূর্তে কলকাতায় নিম্ন আদালতে এই চার্জ বাতিল করা নিয়ে শুনানি চলছে। এই শুনানির আগেই এ বারের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। সেই আন্দোলনকে সমর্থন করেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং। তার পরেই নিজেদের নিরাপত্তার সঙ্কটের যুক্তি দিয়ে সিকিমে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন রোশন গিরি।
কিন্তু শেষ অবধি সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিলে মোর্চা নেতারা কেউ কেউ এখন বলছেন, এর পরে যদি চার্জশিটেও গুরুঙ্গদের নাম রয়ে যায়, তা হলে তাঁরা বড় ধরনের আইনি সমস্যায় পড়তে চলেছেন। এ দিন সর্বোচ্চ আদালতে কপিল সিবল রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, দার্জিলিঙে যদি ইন্টারনেটই না থাকে, তা হলে ভিডিও কনফারেন্স হবে কী করে? রাজ্যের পক্ষে অন্য আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘শুনানিও সরলো না। সিকিমের আশীর্বাদও আর ওঁদের জুটল না।’’