অলচিকি লিপি।
এ বছর প্রথম মাতৃভাষায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি মুর্শিদাবাদের সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়ারা।
২০১৮ সালে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের পড়ুয়ারা প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তবে মুর্শিদাবাদের পড়ুয়া ৪৯ জন এই প্রথম সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা সকলেই সাগরদিঘি ব্লকের চোরদিঘি হাইস্কুলের। তার মধ্যে ৩৩ জন ছাত্র ও ১৬ জন ছাত্রী রয়েছে। তাদের পরীক্ষাকেন্দ্র সাগরদিঘির সাহাপুর সাঁওতাল হাইস্কুল।
মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলেন, ‘‘ওরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় চেয়ে আমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। সেই মতো মাধ্যমিক বিদ্যালয় চালু হয়েছে। এই প্রথম ৪৯ জন পড়ুয়া সাঁওতালি ভাষায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ওরা নিজের ভাষায় পরীক্ষা দিতে পারছে বলে খুব ভাল লাগছে। আমি ওদের পরীক্ষা কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। তবে ওদের স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার যে অভাব রয়েছে তা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
চোরদিঘি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলীপ টুডু বলছেন, ‘‘মাতৃভাষায় পরীক্ষা দিতে পারাটা সব সময়ের গর্বের। তবে আমাদের স্কুলে স্থায়ী কোনও শিক্ষক নেই। বিষয়ভিত্তিক স্থায়ী শিক্ষক পেলে পড়ুয়াদের পড়াশোনার মান আরও বাড়বে।’’
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি ও নবগ্রাম ব্লকের হাতে গোনা কিছু সাঁওতালি মাধ্যমের প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু রয়েছে। ২০১৩ সালে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের পাখিরাডাঙায় ও চোরদিঘিতে দু’টি সাঁওতালি মাধ্যম জুনিয়র হাইস্কুল চালু হয়েছে। ২০১৭ সালে সাগরদিঘির চোরদিঘি জুনিয়র হাইস্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানোর অনুমোদন পায়।
এ বছর চোরদিঘি হাইস্কুলে মোট পড়ুয়া রয়েছে ১১৭ জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-সহ মোট পাঁচজন শিক্ষককে অন্য স্কুল থেকে সেখানে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে। দু’জন ‘ভলেন্টিয়ার’ শিক্ষক রয়েছেন। সেখানে বিজ্ঞানের শিক্ষকের ঘাটতি থাকায় পড়ুয়াদের সমস্যা রয়েছে। একই ভাবে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে নবগ্রামের পাখিরাডাঙা জুনিয়র হাইস্কুলেও।
সাগরদিঘির চন্দনবাটির অর্জুন হাঁসদা এ বারে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। অর্জুন জানায়, মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার অধিকার সকলের রয়েছে। মাতৃভাষায় পরীক্ষা দিতে পেরে ভাল লাগছে। একই রকম ভাবে খুশি নবগ্রামের পাখিরাডাঙার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুজিতা সরেনও।