কৃতী কাকে বলে? কে কীসে কৃতী হয়,তা কে বলতে পারে!
প্রাথমিক স্তরে সব বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করতে করতেই পরবর্তী সময়ে বোঝা যায় কার ঝোঁক কোন দিকে। না হলে একটি ছোট্ট শিশু বুঝতে শিখবে কী করে যে, তার কোন বিষয়টি বেশি পছন্দ হচ্ছে। নিজেকে নিজের কাছে চিনতে সাহায্য করে স্কুল স্তরের শিক্ষা। তবে সেখানে যখনই ফলাফলের চিন্তা ঢুকে যায়, নিজেকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকে প্রবল।
কে কোন বিষয়ে প্রথম হবে— তা সব সময়ে তার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বলবে না। হতেই পারে কারও অঙ্ক করতে বা ইংরেজি পড়তে ভাল লাগে না। সে হয়তো নাচ নিয়েই থাকতে চায় আজীবন অথবা হতে চায় সমাজকর্মী। সেই সব ক্ষেত্রে হয়তো সে খুবই ভাল করবে। কিন্তু মাধ্যমিকে ফল ভাল না হওয়ায় যদি বাড়িতে জোটে শুধুই বকুনি বা তুলনা, তবে হীনম্মন্যতাবোধ কেড়ে নিতে পারে তার আত্মবিশ্বাস। আমার নিজেরই তো অঙ্ক করতে একদম ভাল লাগত না। আমি কি জীবনে একেবারে অসফল হয়েছি?
পড়াশোনা, পরীক্ষার ফল নিয়ে অভিভাবকদের চাপ যুগ যুগ ধরে চলছে। তবে তা নিয়ে ভয় পেলে চলবে না। ছাত্রছাত্রীদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই যে, পরীক্ষায় প্রথম না হলে শিক্ষার কোনও অর্থ থাকবে না। যে শিক্ষা এত দিন ধরে সঙ্গে রয়েছে, তা কোনও না কোনও ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেই। আমি নিজেও একটি স্কুলে পড়াই। স্কুলটি মেয়েদের। আমার ছাত্রীদের থেকে একটাই আশা থাকে শুধু— তারা নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কে কত নম্বর পেল, তা দিয়ে কী বা আসে যায়?
এর মানে এই নয় যে, যারা ভাল ফল করেছে তাদের কোনও কৃতিত্ব নেই। তারা আরও ভাল করুক। সমাজে তাদের অনেক প্রয়োজন আছে। তারা অনেকেই বড় হয়ে দারুণ কেরিয়ার করবে। কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী কিংবা শিক্ষক। তবে এ সবের মধ্যে খেয়াল রাখা জরুরি, সমাজকে কী দেওয়ার আছে নিজের। শিক্ষা যেন শুধু নিজের জন্য না হয়, নিজের মধ্যে আবদ্ধ না থাকে। কারণ, চারপাশটা নিয়ে ভাল করে বেঁচে থাকার শিক্ষাটা অনেকটা হারিয়ে যায় প্রতিযোগিতা প্রবণ শিক্ষার আড়ালে।
আমরা যেন ভুলে না যাই, এ জগতে সকলের জায়গা আছে। কারণ সব রকম মানুষের প্রয়োজনীয়তা আছে। চারপাশের নিরিখে নিজের কী কর্তব্য, তা মাথায় রেখে আনন্দে বাঁচতে পারাই আসল। সুস্থ ভাবে বেশ কিছু বছর সকলকে নিয়ে বেঁচে থাকা আর অন্যদের সুস্থ ভাবে বাঁচতে দেওয়ার শিক্ষায় প্রতিযোগিতার কোনও জায়গা নেই। সে সম্পর্কে যে যত সচেতন, আমার চোখে সে-ই কৃতী!