জেলা সভাপতি: বিধায়ক মোস্তাক আলম। নিজস্ব চিত্র
মৌসম নুর দল ছাড়ার পর শনিবারই প্রদেশ কংগ্রেস জানিয়েছিল, মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হচ্ছেন দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালুবাবু)। তার তিন দিনের মধ্যেই এআইসিসি ডালুবাবুকে সরিয়ে মোস্তাক আলমকে জেলা সভাপতি পদে বসায়। কেন তা করা হল? তা নিয়েই শোরগোল শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে।
দলের একটি মহল বলছেন, ডালুবাবুকে অ্যাডহক সভাপতি করা হয়েছিল, পরে এআইসিসি মোস্তাককে সভাপতি করে। আর এক মহলের মত, ‘এক ব্যক্তি এক পদ’-দলের এই নীতি কার্যকর করতে গিয়েই ডালুবাবুর জেলা সভাপতি পদে কোপ পড়েছে। আবার অন্য একটি মহলের যুক্তি, প্রদেশ নেতৃত্ব হয়তো জেলা সভাপতি পদে ডালুবাবুরই নাম প্রস্তাব করেছিল এআইসিসির কাছে, কিন্তু কোতোয়ালির গনি পরিবার থেকে একের পর এক সদস্য তৃণমূলে নাম লেখানোয় সম্ভবত আস্থা হারিয়ে এআইসিসি দীর্ঘ দিনের দলীয় নেতা মোস্তাককেই সভাপতি পদে বসায়।
ডালুবাবু অবশ্য বুধবার বলেন, “জেলা সভাপতি পদ শূন্য থাকতে পারে না। সে কারণে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র একটি মুখবন্ধ খামে সভাপতি পদের নাম পাঠিয়েছিলেন। শনিবার জেলা কংগ্রেসের সভায় সেই খাম খুলে দেখা যায় যে সোমেনবাবু আমাকেই অ্যাডহক জেলা সভাপতি করেছেন। এ বার এআইসিসি মোস্তাক আলমকে সভাপতি করেছে। এআইসিসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।” তাঁর দাবি, “এআইসিসি সম্ভবত ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ এই নীতিতে এমনটা করেছে। কেননা আমি প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি, আবার আমি জেলা সভাপতি, এক সঙ্গে দুটি দলীয় পদে তো থাকা যায় না।” উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ইউপিএ সরকারের আমলে আমাকে যখন কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছিল তখন আমি জেলা সভাপতি পদে ছিলাম। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর এআইসিসি-ই জেলা সভাপতির পদ ছাড়তে বলে। আমি সভাপতি পদ ছেড়েছিলাম, হয়েছিল মৌসম।’’
সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, প্রদেশের কার্যকরী সভাপতি পদে থেকেও তা হলে ডালুবাবু কেন প্রথমে জেলা সভাপতি হতে রাজি হয়েছিলেন? ডালুবাবু বলেন, “তখন আমার মাথায় বিষয়টি ছিল না।” তবে গনি পরিবারের প্রতি এআইসিসি আস্থা হারানো নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তাকে আমল দিতে চাননি ডালুবাবু।
জেলা কংগ্রেসের নয়া কার্যকরী সভাপতি বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, ‘‘ডালুবাবু প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি। মালদহ সহ ১০টি জেলার সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে তাঁর উপর। ফলে জেলা সভাপতি মোস্তাক আলমকে সম্ভবত করা হয়েছে।’’ তবে দলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, প্রথমে শেহনাজ কাদরি, তারপর লেবুবাবু ও পরে মৌসম তৃণমূলে চলে যাওয়ায় এআইসিসির ভরসা গনি পরিবার থেকে কিছুটা হলেও সরেছে।
মোস্তাক বলেন, ‘‘এআইসিসি দলের সভাপতি পদ ঠিক করেছে। ফলে সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’
যদিও কংগ্রেস সূত্রে খবর, শনিবার দলীয় সভায় যখন ডালুবাবুর নাম সভাপতি পদে ঘোষণা হয়, তখন মোস্তাকই জোর গলায় বিরোধিতা করেছিলেন।