ঘর নেই শুনেই টাকা বরাদ্দ মমতার

মঙ্গলবার বিকেলে বাঁকুড়া থেকে সড়কপথে ঝাড়গ্রাম আসার পথে বিনপুরের মালাবতী এলাকায় কনভয় থামিয়ে রাস্তার ধারের একটি দোকানে সপার্ষদ চা খেতে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে পড়ে বলতে থাকেন, ‘‘‘দিদি, আমার ঘরদোর নেই। কখনও দিনমজুরি, ভিক্ষা করে খিদে মেটাতে হয়। আমার ব্যবস্থা করে দিন।’

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০৪:০০
Share:

প্রশাসনির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী।

মঙ্গলবার বিকেলে বাঁকুড়া থেকে সড়কপথে ঝাড়গ্রাম আসার পথে বিনপুরের মালাবতী এলাকায় কনভয় থামিয়ে রাস্তার ধারের একটি দোকানে সপার্ষদ চা খেতে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে পড়ে বলতে থাকেন, ‘‘‘দিদি, আমার ঘরদোর নেই। কখনও দিনমজুরি, ভিক্ষা করে খিদে মেটাতে হয়। আমার ব্যবস্থা করে দিন।’

Advertisement

বুধবার বেলপাহাড়ি ব্লকের বন-আউলিয়া গ্রামের হুলি কর্মকার নামে ওই মহিলার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ৬৭ হাজার বরাদ্দ হল। সংবাদমাধ্যমের সামনে হুলিদেবীর হাতে বাড়ি তৈরির অনুমোদনপত্র তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাসি, ‘‘দেখলেন, কাল রাস্তায় উনি আমাকে বাড়ির কথা বলেছিলেন। আজ কাজ হয়ে গেল!”

জঙ্গলমহল তাঁর প্রিয় জায়গা। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, জঙ্গলমহলে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন। সেই জঙ্গলমহলে দাঁড়িয়েই বুধবার উন্নয়নের আরও এক দফা কর্মসূচির ঘোষণা করলেন মুখমন্ত্রী।

Advertisement

বুধবার পৌনে ১টা নাগাদ জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা মূলক প্রশাসনিক বৈঠক করতে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যান ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে। আড়াইটে পর্যন্ত চলে বৈঠক। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “খুবই গর্বের বিষয়, চলতি মে মাসের মধ্যে এই জেলায় একশো শতাংশ এলাকায় বিদ্যুদয়ন হয়ে যাবে। মিড ডে মিলে এই জেলায় একশো শতংাশ কভারেজ আছে। একশো দিনের কাজে অন্যান্য জেলার তুলনায় এ বছর এই জেলায় সর্বোচ্চ কাজ হয়েছে। সারা রাজ্যের প্রতিটি স্কুলে স্যানিটেশন পরিষ্কার রাখার জন্য একশো দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়া হবে।”

সেই সঙ্গে পুরনো বিপিএল তালিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘বাম জমানার পুরনো বিপিএল তালিকায় কাজ হবে না। ওটা ভুলে ভরা। আমাদের নতুন তালিকা কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন করেছে। এখনও যারা নাম লেখাতে পারেন নি ‘সোসিও ইকনমিক কাস্ট সেনসাস’-এর আওতায় তাদের নাম যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর জানান, পুজোর আগে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স চালু করা হবে। মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম শহরে রাস্তায় সৌন্দর্যায়নের ও বাতিস্তম্ভের জন্য পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হবে। ঝাড়গ্রামে নিকাশি সমস্যার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া জেলায় ৯ টি সরকারি কলেজ ও ৬টি মাল্টি সুপার হাসপাতাল তৈরির কথাও তিনি জানান। এরপর রাস্তা ও সেতুর কাজ নিয়ে বলার জন্য এগিয়ে দেন পূর্ত দফতরের প্রধান সচিব ইন্দিবর পাণ্ডেকে। সচিব জানান, সাড়ে আটশো কোটি টাকার রাস্তা ও সেতুর কাজ হচ্ছে। সব চেয়ে বড় দু’টি হল নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখায় সেতু ও খড়্গপুর-রানিগঞ্জ জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ। এ ছাড়া নর্থ-সাউথ করিডরের আওতায় চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের মোরগ্রাম থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের মেছগ্রাম পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা হবে। এই রাস্তা হলদিয়া বন্দর থেকে পারাদ্বীপ বন্দরকে সড়কপথে জুড়বে।” এ দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতির জন্য জেলার ১০ জন চাষিকে আর্থিক অনুদান দেন মুখ্যমন্ত্রী।

বুধবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের পরিধি বাড়ানোর কথা বলেছেন। জেলার এক বিধায়ক মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের জন্য আরও টাকা দাবি করলে তাঁকে ধমকে চুপও করিয়ে দিয়েছেন। এ দিন উন্নয়ন সংক্রান্ত ওই মনিটরিং বৈঠকে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব-সহ বিভিন্ন দফতরের সচিব ও আমলারা ছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ-প্রশাসন এবং জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতস্তরের সমস্ত আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। ছিলেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন, আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, শাসক দলের অন্যান্য বিধায়করা।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পরে কনভয় চলে যায় ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের মাঠে। হেলিকপ্টারে কলকাতায় পাড়ি দেন মমতা।

ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন