হালিমের রুলিং বই হোক, চান মমতা

সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ সিঙ্গুরে ঢুকতে দেয়নি। পরিণামে বিধানসভার চেয়ার টেবিল ভেঙে তাণ্ডব করেছিল তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

হাসিম আব্দুল হালিমের স্ত্রী তাজ বেগম। শুক্রবার বিধানসভায় সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ সিঙ্গুরে ঢুকতে দেয়নি। পরিণামে বিধানসভার চেয়ার টেবিল ভেঙে তাণ্ডব করেছিল তৃণমূল। তদানীন্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম বিধানসভার ভাঙচুর-বিধ্বস্ত চেহারা আমজনতাকে দেখানোর জন্য নজিরবিহীন ভাবে তিন দিন সেখানকার দরজা খুলে দিয়েছিলেন। সেই হালিমই স্পিকার হিসেবে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠেছিলেন বলে অকপটে বিধানসভায় জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

Advertisement

প্রাক্তন স্পিকার হালিম-সহ কয়েক জন প্রাক্তন বিধায়কের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে শুক্রবার থেকে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হয়েছে। হালিমের স্মৃতিচারণে তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে

মমতা বলেন, ‘‘ওঁর বড় মেয়ের মৃত্যুর পরেই ওঁদের বাড়িতে প্রথম যাই। ওঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। তার পর থেকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’’ সেই সম্পর্কের সূত্রেই এ দিন হালিমের স্ত্রী, কন্যা-পুত্রের উপস্থিতিতে আদ্যন্ত বামপন্থী এই নেতার পরিবারকে সমবেদনা না জানিয়ে ‘সংগ্রামী অভিনন্দন’ জানান মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি অনুরোধ করেন, ‘‘হালিম সাহেবের বক্তৃতা, বিভিন্ন উক্তি, নির্দেশ বই আকারে প্রকাশ করতে পারলে আগামী দিনে অনেকে তা জানতে পারবে। ওই বইটি বিধানসভার গ্রন্থাগারে রাখা হবে।’’ সঙ্গে সঙ্গেই বিমানবাবু জানিয়ে দেন, ‘‘ওঁর রুলিং একত্রিত করে বিধায়কদের দেওয়া হবে।’’

Advertisement

গণতন্ত্রে সরকার এবং বিরোধীর বিতর্ক যে অবশ্যম্ভাবী, তার উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘সব কথা যে সকলের পছন্দ হবে, তা নয়। কিন্তু ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু কথা আমাদের পথ দেখায়।’’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, জ্যোতি বসুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার স্মৃতিও রোমন্থন করেন মমতা। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পর্বে মাঝেমধ্যেই জ্যোতিবাবু তাঁকে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলতেন বলে সভায় জানান মমতা। কিন্তু পারস্পরিক বিশ্বাসের মর্যাদা

দিতেই দু’জনের সেই কথা অব্যক্তই রাখতে চান মুখ্যমন্ত্রী। হালিমকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে মমতার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। বিভিন্ন দফতরের কাজ নিয়ে বিধায়করা যাতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তার জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন হালিমেরই মস্তিষ্কপ্রসূত বলে সূর্যবাবু উল্লেখ করেন। তাঁর সবর্জনগ্রাহ্যতার স্বীকৃতি দিতে বিধানসভার কোনও কক্ষ বা ভবন হালিমের নামে করার প্রস্তাব দেন ডিএসপি-র বিধায়ক প্রবোধ সিংহ।

সংসদীয় কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত কোনও সমস্যাতেও বিধায়কদের পাশে অভিভাবকের মতো হালিম থাকতেন বলে স্মৃতিচারণ করেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা মহম্মদ সোহরাব। নিরপেক্ষ স্পিকারের ভূমিকায় হালিমকে বরাবর এই বিধানসভা দেখেছে বলে মন্তব্য করেন এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্কর। সে জন্য সভায় পরিষদীয় ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও আক্ষেপ, ‘‘শুধুমাত্র কমিউনিস্ট দলের নেতা হিসেবে নয়, সংসদীয় রাজনীতির এক জন পরামর্শদাতাকে হারিয়েছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন