রায় নিয়ে মুখে কুলুপ মমতার, চুপ দলও

আইন ভ্যানিশ! পশ্চিমবঙ্গে সে আইনের প্রয়োগকারীরাও যেন তা-ই! ইন্টারনেটে মন্তব্য বা ছবি সাঁটার অপরাধে হাজতে ভরার সংস্থান রেখে দেশে চালু ছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা। বাক্স্বাধীনতা রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট সেই ধারা খারিজ করার রায় দেওয়ার ৩৬ ঘণ্টা পরেও রাজ্যের শাসক দল নির্বাক!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৫:৩৬
Share:

আইন ভ্যানিশ! পশ্চিমবঙ্গে সে আইনের প্রয়োগকারীরাও যেন তা-ই!

Advertisement

ইন্টারনেটে মন্তব্য বা ছবি সাঁটার অপরাধে হাজতে ভরার সংস্থান রেখে দেশে চালু ছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা। বাক্স্বাধীনতা রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট সেই ধারা খারিজ করার রায় দেওয়ার ৩৬ ঘণ্টা পরেও রাজ্যের শাসক দল নির্বাক! যাদের পরিচালিত সরকারের হাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতারি দেশ জুড়ে শিরোনামে উঠে এসেছিল। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদী ও মুকুল রায়কে নিয়ে রঙ্গচিত্র ফরওয়ার্ড করে রাজরোষে পড়েন অম্বিকেশবাবু। সুপ্রিম কোর্টে যে জনস্বার্থ মামলায় ৬৬এ ধারা বাতিল হয়েছে, সেখানেও উল্লেখ রয়েছে অম্বিকেশ-কাণ্ডের। তবে এর পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রতিক্রিয়াহীন! দলের নেতৃত্বও মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

ঠিক যেমন হয়েছিল সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চলাকালীন দুর্নীতি মামলায় তামিলনাড়ুর তত্‌কালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার কারাদণ্ডের আদেশের বেলায়। সব রাজনৈতিক দল মুখ খুললেও তৃণমূল সে বার মন্তব্য এড়িয়ে যায়। টুইটার ও ফেসবুকে ইদানীং সক্রিয় মুখ্যমন্ত্রী। সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণ, অভিনেতা শশী কপূরের পুরস্কার প্রাপ্তি বা রাজ্যের পরিচালক-শিল্পীদের জাতীয় পুরস্কার সবেতেই মুখ্যমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া জানান টুইটে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগের সন্ধ্যায় বুধবার মুখ্যমন্ত্রী টুইট-শুভেচ্ছায় বলেছেন, ‘গুড লাক ইন্ডিয়া! কাল ভাল খেলতে হবে। শুভেচ্ছা থাকল। আর দু’টো ম্যাচ জিতলেই হাতে বিশ্বকাপ’! এ হেন মুখ্যমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা নিয়ে টুইটার বা ফেসবুকে কোনও শব্দ ব্যয় করেননি।

Advertisement

তৃণমূলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, অস্বস্তি এড়াতেই মুখ বুজে থাকার চেষ্টা। অম্বিকেশ-কাণ্ড দেশে ‘অসহিষ্ণু সরকার’ হিসাবে তৃণমূলের ভাবমূর্তি গড়েছিল। মালদহের বাপি পালও ইন্টারনেটে মন্তব্যের জন্য গ্রেফতার হওয়ায় সেই তকমা চেপে বসে। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “অম্বিকেশকে তো আমরাই বিখ্যাত করে দিয়েছি! বিরোধীরা ওই ধারায় রুজু মামলা তোলার দাবি করতে পারে। আমাদের পক্ষে কিছু বলা মুশকিল!” এই নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী মম্তব্য করতে চাননি। তাঁর মতে, এটা জাতীয় স্তরের ব্যাপার। জাতীয় স্তরের নেতারাই বলবেন। যদিও সুব্রতবাবুই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক! দলের মুখ্য জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বিদেশে। তাঁর মতামত পাওয়া যায়নি। দলের ‘যুবরাজ’, যুব সংগঠনের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, আদালতের নির্দেশ নিয়ে কী আর বলা যায়? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “কী পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তা না জেনে মন্তব্য করা সমীচীন নয়!”

তৃণমূলের এক যুব নেতার মতে, “আইনটা ছিল বলেই প্রয়োগ করা হয়েছিল। এ আর এমন কী ব্যাপার!” নিছক আইন বলেই যদি প্রয়োগ হয়ে থাকে, তবে তা উঠে যাওয়ায় মতামত দিতে অসুবিধা কোথায়? এমনিতে কোনও নির্দেশ আইনগত ভাবে পুরনো মামলার উপরে প্রযোজ্য হয় না। তবু সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাঁদের নৈতিক অবস্থান কী, তা জানাতেও শাসক দলের নেতৃত্ব এখন অপারগ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন