টাটার সঙ্গে বোঝাপড়ায় উদ্যোগী মমতা

সিঙ্গুর নিয়ে আদালতে বিরাট জয়ের পরে টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধ পুরোপুরি মিটিয়ে এ বার একটি বোঝাপড়ায় উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

সিঙ্গুর নিয়ে আদালতে বিরাট জয়ের পরে টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধ পুরোপুরি মিটিয়ে এ বার একটি বোঝাপড়ায় উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারণ করে দেওয়া দিন, ২৩ নভেম্বরের মধ্যে সিঙ্গুরের জমিকে চাষযোগ্য করে তুলতেও তিনি বদ্ধপরিকর।

Advertisement

বস্তুত সিঙ্গুর নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত আন্দোলনের পক্ষে রায় দেওয়ার পর থেকেই টাটাদের উদ্দেশে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ও তাঁর অন্য মন্ত্রীরা বারে বারে বলছেন— আন্দোলন হয়েছিল অনৈতিক ভাবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে। টাটাদের সঙ্গে কোনও শত্রুতা নেই। সিঙ্গুরের জমির পাকাপোক্ত কাঠামোটি ভাঙার আগেও টাটাদের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছিল রাজ্য। টাটাদের জানিয়ে দেওয়া হয়— সিঙ্গুরের ওই জমির সঙ্গে কৃষকদের সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে থাকায় কারখানার কাঠামোটি ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। টাটা গোষ্ঠী সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছিল— কাঠামো ভাঙতে হলে রাজ্যই ভাঙুক, তারা তাতে হাত দেবে না। তার পরই এ বার টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরুর একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দৌত্যের প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সঙ্গে রয়েছেন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারের ত্রুটি ছিল। এই রায়ের সূত্র ধরে জমি কেনার ক্ষতিপূরণ দাবি করে এখনও ১৫৪ কোটি টাকা চাইতে পারে টাটারা। ‘ত্রুটি’ আগের বাম সরকারের হয়ে থাকলেও সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারকেই তার দায় নিতে হবে। কিন্তু আপাতত তেমন কিছু ঘটছে না। টাটাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ভবিষ্যতের নতুন অধ্যায় গড়ার কাজে মন দিয়েছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, টাটারাও আপাতত আদালতে যাচ্ছে না। যদিও টাটা গোষ্ঠীর মুখপাত্র শুধু একটি কথাই জানিয়েছেন— বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন হওয়ায় আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য তাঁরা করছেন না।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন— শিল্প গড়তে টাটাদের এক হাজার একর জমি দিতে রাজ্য তৈরি। পাশাপাশি সিঙ্গুরের জমিতে তাদের তৈরি শক্তপোক্ত কাঠামোটি ভাঙার খরচও রাজ্য সরকারই বহন করছে। জেলা প্রশাসনের ধারণা, ২৩ নভেম্বরের আগে পুরো জমি চাষযোগ্য করা এবং ২১ তারিখ থেকে ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক নির্বিশেষে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে খরচ দাঁড়াবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, শুধু কৃষকদের কথা ভেবেই এই বিপুল অর্থের দায়ভার রাজ্য সরকার
বহন করছে। জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজটি করা হবে ধাপে ধাপে। এক একটি পর্যায়ে দেওয়া হবে ২৫ কোটি টাকা।

ইচ্ছে করলে ২৩ নভেম্বরের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ জানাতে পারত রাজ্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তা চাইছেন না। প্রশাসনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব সিঙ্গুরে গিয়েছেন। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে নিয়ে তাঁরা কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেছেন। ৯৯৭ একর জমিরমধ্যে ৬৫০ একরে কোনও কাঠামো নেই। কিন্তু এই সব জমির অনেক জায়গায় মাটি কেটে নেওয়ায় সেখানে জল জমে রয়েছে। গ্রামবাসীরা সেখানে মাছ চাষও করেন। সেই পুকুরগুলি এখন মাটি-আবর্জনা দিয়ে ভর্তি করতে হচ্ছে।

গ্রামবাসীরা অবশ্য প্রশাসনকে জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখেন। আশা করেন, তাঁদের জমি ঠিকই ফেরত পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন