মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বেআইনি সব খাদান বন্ধ করতে হবে, বার্তা দেওয়া শুরু করেছিলেন ঝাড়গ্রামের বৈঠক থেকে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকেও বেআইনি বালি খাদান নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে কিছু কয়লা মাফিয়া এখান থেকে দিল্লি পর্যন্ত টাকা পাঠায় অভিযোগ তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন যদি শক্ত হয়, এই বাঁদরামো বন্ধ হয়।’’
দুই বর্ধমানে অজয় ও দামোদরের চর থেকে বালি পাচারের অভিযোগ নতুন নয়। আসানসোল-রানিগঞ্জের খনি অঞ্চলে অবৈধ কয়লা কারবারের অভিযোগও মেলে বিস্তর। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের গোড়াতেই বালি পাচারের প্রসঙ্গ তোলেন। পশ্চিম বর্ধমানে কেন এখনও বেশ কিছু বালিঘাটের নিলাম হয়নি, প্রশাসনকে সে প্রশ্ন করে বলেন, ‘‘সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে না, কিছু লোক করে খাচ্ছে।’’
বৈঠকে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি জানান, বালি পাচার আটকাতে পুলিশের সঙ্গে প্রশাসন যৌথ অভিযান করছে। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে পরামর্শ দেন, ‘‘রাস্তায় আটকানো মুশকিল। তাই গোড়ায় আটকাতে হবে।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যখন আমরা বলি, তখন কিছু দিন কাজ হয়। ফের গাফিলতি শুরু হয়। নিয়মিত প্রক্রিয়া চালানোটা জরুরি।’’
বেআইনি বালিঘাটের ব্যাপারে পুলিশের কাছে খবর থাকে না কেন, সে প্রশ্নও তোলেন মমতা। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় এবং আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনাকে তাঁর নির্দেশ, ‘‘যদি কোনও আইসি (এ ব্যাপারে) মদত দেয়, তাকে বদলে দেবে।’’ পুলিশকর্মীদের মধ্যে কারা বালি-কারবারে যুক্ত, সে তালিকাও তাঁর কাছে রয়েছে, এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সবের ফাঁকেই বলেন, ‘‘কিছু কয়লা মাফিয়া আছে, এখান থেকে দিল্লি পর্যন্ত টাকা পাঠায়। তোমরা বলবে, ‘পলাতক আছে, পাওয়া যাচ্ছে না’— এ সব রুটিন কথাবার্তা। আমরা অ্যাকশন চাই।’’
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব অবশ্য দাবি করেন, লাগাতার অভিযানে জেলায় ৯০ শতাংশ বালি পাচার বন্ধ হয়েছে। জরিমানাও আদায় হয়েছে। বেআইনি খাদান বন্ধে সিসিটিভি বসিয়ে ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান পশ্চিম বর্ধমানের কর্তারা। দিল্লিতে কয়লা মাফিয়াদের টাকা পাঠানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোনও জবাব দেব না। শুধু বলব, প্রদীপের নীচেই অন্ধকারের গল্প উনি নিশ্চয় শুনেছেন।’’