কাঁকসার রঘুনাথপুরে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিকাশ মশান
এক দিকে পশ্চিম বর্ধমানের শিবপুর। অন্য দিকে বীরভূমের জয়দেব কেঁদুলি। মাঝখানে বইছে অজয়। পারাপারের একমাত্র উপায় নৌকা। সোমবার কাঁকসার রঘুনাথপুরে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস ও পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, এই এলাকায় তৈরি হবে নতুন সেতু। এর ফলে দীর্ঘ দিনের সমস্যা মিটবে বলে আশা এলাকাবাসীর।
কাঁকসা ও জয়দেবের মাঝে সেতু তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতিদিন বহু মানুষকে অজয় পারাপার করেন নানা কারণে। বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। জল কমলে ভরসা অস্থায়ী বাঁশের সেতু। কিন্তু তাও বেশিদিন টেকে না বলে অভিযোগ। ফলে সাইকেল, মোটরবাইক নিয়ে বালি ঠেলে যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের। জয়দেব কেঁদুলির মেলার সময় হাজার হাজার মানুষ বর্ধমানের নানা এলাকা থেকে বীরভূম যান। বাসিন্দাদের দাবি, অজয়ের ওই অংশে সেতু তৈরি হলে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মুচিপাড়া-শিবপুর রাস্তা ধরে শান্তিনিকেতন যাওয়ার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার কমে যাবে। এর ফলে বর্ধমান ও বীরভূম তো বটেই পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার একাংশের মানুষও উপকৃত হবেন বলে জানান স্থানীয়রা।
সোমবার কাঁকসার রঘুনাথপুরের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দ্রুত ১৬৫ কোটি টাকা খরচে অজয়ের উপরে নতুন সেতু তৈরি করা হবে।’’ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জয়দেব থেকে সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথাও জানান তিনি। একই সঙ্গে রানিগঞ্জের নুনিয়া নদীর উপরেও সেতু তৈরির কথা জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া নতুন জেলার জন্য বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা এ দিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও মোট ৭০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ওই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে রাস্তা, পথবাতি, পানীয় জলের প্রকল্প, প্রশাসনিক অফিস নির্মাণ, গ্রন্থাগারের ভবন, বিদ্যুৎ সাবস্টেশন তৈরি-সহ নানা কিছু। রাজ্য জুড়ে নতুন এক হাজার ‘মাতৃযান’ দেওয়া হবে বলেও এ দিনের সভায় জানানো হয়। তার মধ্যে পশ্চিম বর্ধমান পাবে ১১টি।
চাষিদের লক্ষ করেও বেশ কিছু বিষয় বলতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিন তিনি জানিয়েছেন, নিম্ন দামোদর অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচের জন্য দু’হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘এর ফলে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন।’’ গত সাড়ে ছ’বছরে রাজ্যে ৮১ লক্ষ মানুষকে কাজ দেওয়া হয়েছে বলেও এ দিনের সভায় দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন এবং পরিকাঠামো উন্নতির বিষয়ে নানা কথা বললেও তাঁর বক্তব্যে সরব হয়েছে বিরোধী সিপিএম। সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের রুগ্ন শিল্পের কথা তো একবারও বললেন না। শিল্প বাদ দিয়ে উন্নয়ন হয়?’’