Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: ভবানীপুরে জয়ের পরে সর্ব ভারতীয় স্তরে জোটের রাশ ধরতে চান মমতা, দলের তিরে কংগ্রেস

গতকাল এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার ভবানীপুরের ফলাফল প্রকাশের পরে শুভেচ্ছা জানান মমতাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১৬
Share:

গুরুদ্বার দর্শনের পরে মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ভবানীপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জয়ের পরে এ বার সর্ব ভারতীয় স্তরেও জোট রাজনীতির রাশ কড়া হাতে ধরতে উদ্যোগী তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। রবিবার দুপুরে ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার সময় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিরোধী আঞ্চলিক দলের নেতাদের শুভেচ্ছা, টুইট-বার্তা এবং ফোন কল এসেছে তৃণমূল নেত্রীর কাছে। আজ, সোমবার প্রত্যেককে টুইটে উত্তর দিয়েছেন মমতা। বিরোধী নেতাদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘এক সঙ্গে দেশের সংবিধান রক্ষা এবং দেশবাসীর কল্যাণের জন্য লড়াই করতে হবে।’

Advertisement

তবে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের কয়েক জন নেতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে শুভেচ্ছা-বার্তা এলেও (এবং বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর কাছ থেকেও) কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এখনও পর্যন্ত নীরব। অন্য দিকে, ভবানীপুর জয়ের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসের প্রতি তোপ দেগে লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপি-বিরোধিতা থেকে সরে এসে অহর্নিশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আক্রমণ করে গিয়েছে কংগ্রেস এবং বামেরা। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে কংগ্রেসের সেই ‘তাঁবেদারি’ ভাল ভাবে নেননি, তা ভোটের ফলে প্রমাণিত। রাজ্য কংগ্রেস অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে, ভোট প্রচারে আগাগোড়া তাদের আক্রমণ করে গিয়েছে তৃণমূলও।

গতকাল এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার ভবানীপুরের ফলাফল প্রকাশের পরে শুভেচ্ছা জানান মমতাকে। মমতা জবাবে লিখেছেন, “পওয়ারজি, আপনার শুভেচ্ছার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। মানুষের কল্যাণের জন্য এক সঙ্গে কাজ করার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।” ডিএমকে-র কানিমোঝি এবং স্টালিন দু’জনেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতাকে। কানিমোঝি তাঁর নিজের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর একটি ছবি পোস্ট করে টুইট করেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের আসনটি ধরে রাখলেন না, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির আশাকেও উজ্জ্বল করলেন।’ জবাবে মমতা বলেছেন, ‘আমরা এক সঙ্গে সর্বদা সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার জন্য চেষ্টা করে যাব।’ স্টালিনের শুভেচ্ছার উত্তরে মমতা লিখেছেন, ‘ভবানীপুর এবং বাংলার প্রত্যেক মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।’ ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিপুল জয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার প্রত্যয়কে তুলে ধরেছে।’ মমতার উত্তর, ‘আপনার এই শব্দগুলি দেশের পবিত্রতা রক্ষার লড়াইয়ে আমাকে শক্তি দিচ্ছে।’

Advertisement

বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতাদের অভিনন্দনের ঢেউয়ের পাশাপাশি গতকাল কংগ্রেসের মূলস্রোতের নেতা কমলনাথকে দেখা গিয়েছিল শুভেচ্ছা পাঠাতে। তিনি ব্যক্তিগত স্তরে মমতার পুরনো বন্ধুও। আজ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী জবাবে বলেছেন, ‘অনেক ধন্যবাদ। সর্বান্তকরণে এই অভিবাদনে আনন্দ প্রকাশ করছি।’

তবে আজ সারা দিনের রাজনৈতিক সংলাপের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট, এই জয়ের পরে বিরোধী জোটের প্রশ্নে কোনও ভাবেই কংগ্রেসকে নেতৃত্বের জায়গাটি ছাড়তে চাইবেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। সুদীপের কথায়, “এক জন নারী কী ভাবে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানো বিজেপিকে রুখে দিতে পারে, সারা দেশে তার একটিই উদাহরণ তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন সব চেয়ে শক্তিশালী বিজেপি-বিরোধী মুখ।” তাঁর বক্তব্য, “অধীর চৌধুরী বা সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতারা চব্বিশ ঘণ্টা মমতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গিয়েছেন। তাঁরা যে বিজেপির তাঁবেদারি করছেন, তা মানুষ বুঝেছেন। সেই কারণেই জঙ্গিপুরের মতো আসনেও ৯২হাজার ভোটে হারতে হয়। বিধানসভা থেকে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হয়েছে।”

জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব জানাচ্ছে, বিজেপির ‘তাঁবেদারি’ করার অভিযোগ যারা আনছেন, সেই তৃণমূল নেতৃত্বই জাতীয় এবং রাজ্যস্তরে বিজেপিকে ছেড়ে ক্রমাগত কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধীকে নিশানা করে যাচ্ছেন। ইডি-র দীর্ঘ জেরার পরে বেরিয়ে, কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলই মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করছে। কংগ্রেস ঘরে ঢুকে বসে রয়েছে।’’ তবে তাঁর দাবি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বারই দেরি না করে একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলকে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা জয়ের পরে দিল্লি গিয়ে সনিয়ার সঙ্গে দেখাও করেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস নিজের দলই সামলাতে পারছে না। দুই, তারা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক শত্রু হিসাবে বিজেপিকে না বেছে অহর্নিশ তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করে গিয়েছে। টিকে থাকতে হলে, পথ বদলাক কংগ্রেস।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন