ক্ষুব্ধ অসীমও

মোদীর ‘তুঘলকি সিদ্ধান্তে’ সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পদত্যাগ দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘টিভি চ্যানেল বন্ধ করার ফতোয়া দিয়ে আগে রাজনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। এ বার আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি হল।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:৩১
Share:

৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পদত্যাগ দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘টিভি চ্যানেল বন্ধ করার ফতোয়া দিয়ে আগে রাজনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। এ বার আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি হল।’’

Advertisement

মমতা মনে করেন, এটা নরেন্দ্র মোদী সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন সাধারণ ও গরিব মানুষ, কর্মচারী, বিভিন্ন ছোট ব্যবসায়ী। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘এ ভাবে টাকা বাতিল করে দেশময় আর্থিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হল। যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে সাধারণ মানুষের কথা ভাবা হয়নি।’’ তিনিও মনে করেন, ‘‘যাঁর ঘরে ৫০০-১০০০ টাকার নোট রয়েছে, তিনি এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপদে পড়বেন। সরকারের উচিত ছিল, আগে থেকে সমসংখ্যক নোট ছাপিয়ে এবং ভাবনাচিন্তা করে এই পদক্ষেপ করা।’’

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় তিনি বিভ্রান্ত বলে জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি অর্থনীতি বিশেষ বুঝি না। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি। ব্যাঙ্ক খুচরো টাকা দেয় না। দেয় ৫০০ টাকার নোট।

Advertisement

দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আজ ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলেছি আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে। আমায় কিন্তু ব্যাঙ্ক সব ৫০০ টাকার নোট দিয়েছে।’’ তার পরেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমি যদি কাল সকালে দোকানে কিছু কিনতে যাই, খাবার জিনিস কিনতে হয়, যদি গাড়ি ভাড়া দিতে হয় — আমি দেব কী করে?’’

মোদীর ঘোষণায় দেশের মানুষ চিন্তিত দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কাল সকালে যে সাধারণ মানুষ বাজারে যাবেন, তিনি কী ভাবে নিজের খাবার কিনবেন? সরকার যদি
সত্যিই কালো টাকা রুখতে চাইত, তা হলে একটা ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ তৈরি করত। এ রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নিত না।’’

কাল সকালে যে সাধারণ মানুষ বাজারে যাবেন, তিনি কী ভাবে নিজের খাবার কিনবেন? সরকার যদি সত্যিই কালো টাকা রুখতে চাইত, তা হলে একটা ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ তৈরি করত।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী

আজ বুধবার যে ব্যাঙ্কে সাধারণের লেনদেন বন্ধ, সে প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘তার মানে এটাই দাঁড়াচ্ছে যে, ওঁরা (কেন্দ্র) আর্থিক জরুরি অবস্থা চাইছে। ওনাকে (নরেন্দ্র মোদী) দেখে মহম্মদ বিন তুঘলকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে!’’ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় নোট বাতিল করতে পারেন। কিন্তু জনগণকে তো নিশ্বাস ফেলার সুযোগ দেবেন। ১০০ টাকার নোট যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, আগে তার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু তা না করে বলে দিলেন, আজ রাত থেকে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বন্ধ!’’

এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মোদীর আর সরকারে থাকা উচিত নয় বলেই মত মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি মনে করেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির উচিত অবিলম্বে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বদল করা। কারণ, ওরা সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলতে চাইছে।’’ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই ‘সাহসী সিদ্ধান্তকে’ স্বাগত জানিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর এই ‘সাহসী পদক্ষেপের’ সমালোচনা করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিংহ।

ইউপিএ জমানায় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম একবার ৫০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। সে কথা মনে করিয়ে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘উনি দু’বছর আগের ৫০০ টাকার নোট বাতিল করেছিলেন। কিন্তু এরা কোনও সময় দিল না! এর ফলে দেশে অচলাবস্থা জারি হয়েছে। বাজারে লোকেরা কাঁদছেন। গরিব মানুষ খেতে পাবেন না। আমি কেন এত উত্তেজিত বুঝতে পারছেন?’’

মোদীকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিদেশে যে কয়েকশো কোটি কালো টাকা রয়েছে, সরকার তা নিয়ে আসুক। বড়লোকদের থেকে সেই কালো টাকা ফেরাতে পারছে না বলেই এই নাটক! লন্ডনে বিজেপির বহু টাকা রয়েছে। সে সব দেশে নিয়ে এলে খুশি হব। কিন্তু গরিব মানুষকে এ ভাবে মেরে ফেলা কেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখন পোস্ট অফিসে ১০০ টাকা নেই, ব্যাঙ্কেও নেই। জাতীয় স্তরে এই কথাগুলো জানানো দরকার।’’ তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি মনে করেন, আমি এ সব বলে কালো টাকাকে প্রশ্রয় দিচ্ছি, তা হলে ভুল হবে। আমি অবশ্য এতে কিছু মনে করব না। আমি সারা জীবন গরিব মানুষের জন্য লড়াই করেছি। সেটা চালিয়ে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন