মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে। নিজস্ব চিত্র।
শুরুটা করেছিলেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী। তার পরে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ওজনদার নেতা-মন্ত্রীরা দল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। সোমবার দল ছাড়লেন ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদারও। এই আবহে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু জোর গলায় ঘোষণা করলেন, ‘‘দিদিও থাকবে, আপনারাও থাকবেন। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডও চলবে।’’
আসন্ন বিধানসভা ভোট নিয়ে নানা জল্পনার আবহে মুখ্যমন্ত্রীর এই কথায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যায়। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘উনি তো উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করেছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে উনি কল্যাণীতে এমস নিয়ে চলে গিয়েছেন। লোকসভা, পঞ্চায়েতে উনি ভোট পাননি, বিধানসভা নির্বাচনেও পাবেন না।’’
বস্তুত, লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে আক্ষেপ এ দিনও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। উত্তরবঙ্গের ৮টির মধ্যে ৭টিতেই জিতেছিল বিজেপি। একটিতে কংগ্রেস। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা এ দিনও বলেন, ‘‘এই দেশ বিক্রির সরকারকে এ বার বিক্রি করে দিন। আমরা লোকসভায় এখানে গোহারা হেরেছি। তা-ও আমার লজ্জা নেই। আমার আশা, এ বার আপনারা আমাকে পুষিয়ে দেবেন।’’ পাশাপাশি, বাজেট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিয়ে নিজের সরকারের কাজের খতিয়ান বারবার তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যে স্বাস্থ্যসাথীর কথা আলাদা করে উল্লেখ করেন তিনি। সেই প্রকল্পে পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকার বিমা, খাদ্য, শিক্ষার কথা তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিকাঠামোর মতো বেশিরভাগ কাজই করে দিয়েছি। আগামী পাঁচ বছর ছাত্র, যৌবনের কাজ করব।’’ তিনি বলেন, ‘‘করোনার সমস্যার জন্য কেন্দ্রের ‘ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন’ প্রকল্পের কাজ রাজ্যে কিছুটা থমকে যায়। কিন্তু এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রেশনের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। সেসের টাকা সব নিয়ে যায়। তা-ও আমি আগামী দিনে ভাল করে সরকার চালিয়ে বাংলাকে সেরা রাখব।’’
এত প্রকল্প থাকতে স্বাস্থ্যসাথীর কথাই কেন তিনি আলাদা করে তুলে ধরলেন? পর্যবেক্ষকদের মতে, সম্প্রতি এই প্রকল্পটিই সবথেকে জনপ্রিয়। এমনও সংশয় তৈরি হয়েছে যে, যদি এ বারে সরকারে বদল হয়, তা হলে কি প্রকল্পটি থাকবে? তাই মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে গেলেন, তিনি এবং প্রকল্প, সবই থাকবে। কালনায় এ দিনই বিজেপির সভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ওরা বলে, দিদিমনি দু’শো গুণ কাজ করেছেন। তা হলে দুয়ারে সরকার কেন? এখন স্বাস্থ্যসাথী, ভোটসাথী কার্ড বার করেছে। সব ঢপবাজি। ভোটের জন্য এর আগে তিন কোটি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়েছে। এখন নার্সিংহোম মালিকদের ডেকে চাপ দিচ্ছে, বলছে লাইসেন্স বাতিল করে দেব। বলছে, এখন তিনটে মাস কোনও রোগীকে ফেরাবে না। তিন মাস পরে চুরির লাইসেন্স রিনিউয়াল হয়ে গেলে, আবার কয়লা চুরি হবে, গরু চুরি হবে!’’