উত্তরকন্যায় মমতা ও চামলিঙের বৈঠক কাল

এ দিন পাহাড়ে বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিকিম আমাদের প্রতিবেশী। আমরা চাই ওখানকার ব্যবসায়ীরাও দার্জিলিঙে আসুন। বিনিয়োগ করুন।’’

Advertisement

কিশোর সাহা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৬
Share:

দার্জিলিঙের বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

আট মাস পরে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম পাহাড়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সেখানে এক অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, দার্জিলিঙের শান্তি নষ্ট করতে সিকিম মদত দিচ্ছে! তার পরে মাত্র এক মাসের ব্যবধান। বুধবার সেই দার্জিলিঙে দাঁড়িয়েই মমতা জানালেন, আগামী শুক্রবার, ১৬ তারিখ সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবনকুমার চামলিঙের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। বৈঠক হবে উত্তরকন্যায়।

Advertisement

এ দিন পাহাড়ে বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিকিম আমাদের প্রতিবেশী। আমরা চাই ওখানকার ব্যবসায়ীরাও দার্জিলিঙে আসুন। বিনিয়োগ করুন।’’ উত্তরবঙ্গের কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার কথায়, সিকিমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্কে বহু উত্থান-পতন রয়েছে। ২০১১ সালে সে রাজ্যে ভূমিকম্পের পরে গ্যাংটক গিয়েছিলেন মমতা। তখন চামলিঙের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল। কিছুক্ষণ কথাও হয়। কিন্তু এমন আনুষ্ঠানিক বৈঠক কখনওই হয়নি।

হঠাৎ এমন বৈঠকের প্রয়োজন পড়ল কেন? রাজনীতিবিদদের কথায়, সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে পড়শি রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কে নানা জট তৈরি হচ্ছিল। এক দিকে, পাহাড়ে আন্দোলনের সময়ে বরাবরই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে সিকিমের শাসকদল এসডিএফ। এ বারেও তারা বিধানসভায় এই দাবির পক্ষে প্রস্তাব পাশ করে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পাল্টা বলে, এমন ভাবে পড়শি রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রস্তাব পাশ করা যুক্তরাষ্ট্রীর কাঠামোর পরিপন্থী। এর পরে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের জন্য সিকিমের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ৩২ হাজার কোটি টাকা দাবি করে সিকিম। পশ্চিমবঙ্গ পাল্টা অভিযোগ করে, বিমল গুরুঙ্গকে পালাতে সাহায্য করেছে সিকিমের পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

অন্য দিকে, দু’রাজ্যের মধ্যে গাড়ি চলাচল নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, সিকিমকে কোনও রকম ‘বাড়তি’ সুযোগ সুবিধে দেওয়া হবে না। দেখানো হবে না ‘উদারতা’ও। এক রাজ্যের বাণিজ্যিক গাড়ি অন্য রাজ্যে যেতে হলে পারমিট প্রয়োজন। সিকিমের গাড়িগুলিকে রাজ্যে ঢোকার পারমিট দেওয়ায় কড়াকড়ি শুরু হয়। বেশ কিছু পারমিটের নবীকরণও আটকে দেওয়া হয়।

প্রশাসন সূত্রে খবর, পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে সিকিম বেশ কয়েক বার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও দিল্লি কোনও রকম হস্তক্ষেপ করেনি। এই অবস্থায় আলোচনাই সঠিক পথ বলে মনে করে সিকিম প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গও তাতে সায় দেয়। সিকিমের শাসক দলের এক নেতার কথায়, ‘‘দুই প্রতিবেশী রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান আলোচনায় বসলে অনেক দূরত্বই কমে যেতে পারে।’’

পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, আলোচনায় বসার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দুই রাজ্যের মধ্যে আলোচনা ও স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে সিকিমকে পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘দার্জিলিঙে গোলমাল হলে সিকিম তাতে ইন্ধন দেবে না— এটাও তখন নিশ্চিত করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন