আয়ুষ্মান মমতা-হীন, নাম করেই আক্রমণ মোদীকে

তাঁর কথায়, ‘‘সব কাজ আমরা করব, আর তুমি নরেন্দ্র মোদী দালালি করবে? বাড়ি বাড়ি চিঠি পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া। কার্ড পাঠাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৬
Share:

কেন্দ্রের চিঠির লোগো(ইনসেটে) নিয়েই প্রশ্ন মমতার। বৃহস্পতিবার নদিয়ায়।—ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত তীব্রতর করে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প থেকে রাজ্যকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে এ সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। এর আগে কৃষিবিমা প্রকল্পের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রকে বাদ দিয়ে ‘একলা চলো’র সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে কেন্দ্রের অন্যান্য প্রকল্প থেকেও রাজ্যকে সরিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক থেকে সাধারণ মানুষের টাকা ‘সরিয়ে’ নেওয়ার চক্রান্ত করছে। সেই সঙ্গে অ-বিজেপি রাজ্যগুলিকে ‘সতর্ক’ করে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্র সমস্ত টাকা অপব্যবহার করছে। রাজ্যের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে।’’

Advertisement

এ দিন নদিয়ার কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক সভায় গোড়া থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নাম করে তাঁকে আক্রমণ করা ছিল মমতার বক্তৃতার উল্লেখযোগ্য দিক। তাঁর কথায়, ‘‘সব কাজ আমরা করব, আর তুমি নরেন্দ্র মোদী দালালি করবে? বাড়ি বাড়ি চিঠি পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া। কার্ড পাঠাচ্ছে। সেটা নাকি স্বাস্থ্যবিমার কার্ড। অথচ ওতে রাজ্যের টাকা আছে। টাকা দিচ্ছি আমরা, আর সেই টাকায় তুমি, নরেন্দ্র মোদী প্রচার চালাবে? এটা হতে পারে না। আমি রাজ্যকে সরিয়ে নিলাম। এ বার দেখি তুমি কী ভাবে টাকা দাও!’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, স্বাস্থ্যবিমার জন্য রাজ্য ৮০% টাকা দেয়, কেন্দ্র দেয় মাত্র ২০%। অথচ রাজ্যকে ‘সম্পূর্ণ অন্ধকারে’ রেখে কেন্দ্র এমন ভাবে প্রচার করছে, যাতে মনে হচ্ছে, পুরো প্রকল্পটাই কেন্দ্রের। শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বাড়ি বাড়ি কেন্দ্র যে চিঠি পাঠাচ্ছে, তার উপরের লোগোটিও বিজেপির প্রতীক ‘পদ্মফুল’এর মতো। মমতার কথায়, ‘‘লোগোটা দেখবেন, যেন পদ্মফুল ওদের। আমাদের পুজোর পদ্মফুল নয়। ওদের ধান্দাবাজির, দুর্নীতির, দেশে বিভেদ সৃষ্টির পদ্ম।’’

আরও পড়ুন: যৌনপল্লির অন্ধকার থেকে ক্যানিংয়ের নাবালিকাকে ফেরাল ফোন!

Advertisement

এ দিন দিল্লিকে পাঠানো নবান্নের চিঠিতে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, ২০১৭ সাল থেকে রাজ্যে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চলছে। কেন্দ্রের সঙ্গে মউ সইয়ের সময় রাজ্য জানিয়েছিল, তারা প্রকল্পটির নাম ‘স্বাস্থ্যসাথী’ই রাখবে। কেন্দ্র তা মেনেও নিয়েছিল। অথচ বাড়ি বাড়ি যে চিঠি ও কার্ড কেন্দ্র পাঠাচ্ছে, তাতে ‘স্বাস্থ্যসাথী’র উল্লেখ নেই।

রাজ্যের সিদ্ধান্তকে অবশ্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলছেন আয়ুষ্মান কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে এ দিন বলা হয়, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আয়ুষ্মান খাতে মোট ৭৯৮.৩৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ব্যয় ১৯৩ কোটি। কর্তৃপক্ষের মতে স্বাস্থ্যবিমার কৃতিত্ব কে নেবে, সেই বিবাদ থেকেই রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত।

এ দিন অ-বিজেপি রাজ্যগুলিকেও হুঁশিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ফেডারেল স্ট্রাকচারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে রাজ্যে সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করছেন। ভারতে কোনও দিন এ জিনিস হয়নি। আগুন নিয়ে খেলবেন না। কেন্দ্র কেন্দ্রের কাজ করুক।’’ মমতা এ দিন দাবি করেন, রাজ্য থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা কর পায় কেন্দ্র। তারই একটা অংশ রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় করা হয়। যা প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ২০%। বাকি টাকা রাজ্যই দেয়। ফলে রাজ্য প্রকল্প থেকে সরে এলে কেন্দ্র অথৈ জলে পড়বে।

উল্লেখ্য, এর আগে মমতা জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রকে কোনও তথ্য দেবে না রাজ্য। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যে তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের ‘সাধারণ অনুমোদন’ও বাতিল করেছেন মমতা।

এ দিন মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘‘কত সিবিআই আছে, ইডি আছে, পাঠান। আমি দেখতে চাই।’’ এর পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ

এনে তিনি বলেন, ‘‘আর একটা ভাঁওতা দেওয়ার চেষ্টা করবে। বলবে, চাষিদের অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ও সবে কান দেবেন না। কার টাকা ওগুলো? আমার, আপনার ব্যাঙ্কে সঞ্চিত টাকা। এর পর যখন টাকা তুলতে যাবেন, দেখবেন সব শূন্য হয়ে গিয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা নেই। রাজনীতি করতে গিয়ে ব্যাঙ্কের টাকাতেও ওরা হাত দিচ্ছে।’’

উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণ নিয়ে এ দিন ফের সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। আবার মনে করিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ নিয়মবিরুদ্ধ। কেন্দ্র গায়ের জোরে আইন করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন