তিন দিনে জমি সাবেক ছিটমহলে

গত ২০১৫ সালে ছিটমহল হস্তান্তর হয়। সাবেক ছিটমহলের বেশির ভাগের ক্ষোভ, এর পর থেকে যা যা তাঁরা পাবেন বলে চুক্তি হয়েছিল, তার প্রায় কিছুই পাননি।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৮
Share:

প্রশাসক: কোচবিহারে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

তিন দিনে অর্ডিন্যান্স জারি করে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের হাতে জমির অধিকার তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহারে উৎসব অডিটোরিয়ামে প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের ওই বিষয়ে নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে বলেন, তিনি এবং মুখ্যসচিব আগামী কয়েক দিন কোচবিহারে আছেন। তার মধ্যেই যেন ফাইলে প্রয়োজনীয় তাঁদের সই করিয়ে নেওয়া হয়।

Advertisement

গত ২০১৫ সালে ছিটমহল হস্তান্তর হয়। সাবেক ছিটমহলের বেশির ভাগের ক্ষোভ, এর পর থেকে যা যা তাঁরা পাবেন বলে চুক্তি হয়েছিল, তার প্রায় কিছুই পাননি। গত সাড়ে তিন বছরে জুটেছে স্রেফ টিনের বাড়ি আর খোয়ার রাস্তা। রেশন কার্ড পাননি অনেকে। জোটেনি নিজের ভাগের জমিও। এ দিনের বৈঠকে ছিটমহলের উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই মুখ খোলেন তৃণমূলের দুই বিধায়ক, দিনহাটার উদয়ন গুহ এবং শীতলখুচির হিতেন বর্মণ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক দাবি করেছিলেন, সাবেক ছিটমহলে বিদ্যুৎ, রাস্তা থেকে শুরু করে পানীয় জল, স্কুল, হাসপাতাল— প্রায় সব ব্যবস্থাই হয়েছে। তবে দিনহাটা-২ এবং শীতলখুচিতে দু’টি হেল্থ সাব সেন্টার হয়নি। উদয়ন তখন জানান, তাঁর বিধানসভার মধ্যে থাকা দু’টি সাবেক ছিটমহল বাকালির ছড়া ও শিবপ্রসাদ মুস্তাফিতে কোনও উন্নয়ন হয়নি। এর পরেই হিতেন জানান, তাঁর বিধানসভা এলাকায় নলগ্রাম সাবেক ছিটমহলে দু’টি কমিউনিটি হলে কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। কিন্তু তার পরে সেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করা বা অন্য কোনও কাজ হয়নি।

এর পরেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা জমির স্বত্ব এখনও পাননি, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেখানে উপস্থিত থাকা ভূমি সংস্কার দফতরের প্রধান সচিব মনোজ পন্থ ওই ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়ার কথা জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সংশোধন, নথি তৈরির প্রক্রিয়া করার জন্য কি বছরের পর বছর চলে যাবে? আমি না-বলা পর্যন্ত কিছু হবে না? তিন দিনের মধ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের জমির অধিকার তুলে দিতে হবে। পরে বিধানসভা শুরু হলে সংশোধন করে নেবেন।” তিনি উত্তরবঙ্গে থাকা অবস্থাতেই ওই ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, দরকারে তিনি ও মুখ্যসচিব ফাইলে সইও করে দেবেন। ভূমি দফতরের প্রধান সচিব মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, সাবেক ছিটমহলের ৬৯০০ একর জমির সমীক্ষা করার কাজ তাঁদের শেষ হয়েছে। ওই জমি নথিভুক্ত করার জন্যেই কিছু প্রক্রিয়া প্রয়োজন। সব শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ ভাবে কাজ পড়ে থাকবে তা মেনে নেওয়া যাবে না। সব দফতরকে বলছি কুড়ি দিনের মধ্যে কাজ শেষ করুন।”

Advertisement

বিষয়টিকে ভোটের চমক বলে দাবি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের আগে দিকে দিকে যখন সমর্থন কমছে, তখন ছিটমহলে ভোট কেনার চেষ্টা চলছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ভুয়ো ভোটার ঢোকানোরও চেষ্টা হবে।’’ তাঁর এই দাবিকে নস্যাৎ করে কোচবিহারের তৃণমূল নেতৃত্ব বলেন, ‘‘বিজেপির পায়ের নীচে জমি নেই। তাই এ সব অপপ্রচার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন