মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে এসে অমিত শাহ যখন সরকার পরিবর্তনের অঙ্ক পেশ করছেন, সেই সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাল্টা নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের সভা থেকে মমতা মঙ্গলবার অনুপ্রবেশের তির ঘুরিয়ে দিয়েছেন শাহের দিকে। পশ্চিমবঙ্গের বঞ্চনা ও বিজেপির দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) সূত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন মমতা। নাম না-করে ‘দুর্যোধন, দুঃশাসন’ থেকে ‘শকুনি মামা’ কোনও কটাক্ষই বাদ যায়নি!
বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় বীরসিংহপুরে এ দিনের সভা থেকে শাহের নাম না-করে মমতা বলেছেন, ‘‘ভোট এসে গিয়েছে। এক জন দুঃশাসন এসেছেন বাংলায়! ভোট এলে দুর্যোধন, দুঃশাসনেরা আসেন। ওঁদের দু’চোখ দেখলেই আতঙ্ক হবে। এই বুঝি কিছু ক্ষতি করতে এল রে! শকুনি মামার চ্যালা-চামুন্ডারা ঘুরে বেড়াচ্ছে! আর বলে বেড়াচ্ছে, বাংলায় নাকি দেড় কোটি লোকের নাম বাদ যাবে। কেন? যাঁরা সারা জীবন বাংলায় থেকেছেন, তাঁরা ভোটার বাংলার।’’
ভোটার তালিকার সংশোধনের সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘তুমি এসআইআর করতে দু’মাস সময় নিলে। আর বাদ দিতে দেড় কোটি লোককে দেড় দিন সময় দিলে? এআই-কে (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে করিয়েছো। এটা বড় কেলেঙ্কারি। দুর্নীতিগ্রস্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করো। তোমার পদত্যাগ চাই! তা না হলে ভারতবর্ষের মানুষ তোমাকে পদচ্যুত করবে।’’ মমতার মতে, ‘‘এসআইআর করত ওরা সময় নিয়ে, আমাদের কোনও আপত্তি ছিল না। এক কোটি ৩৬ লক্ষ লোককে ডেকেছে, যাদের খসড়া তালিকায় নাম উঠেছে। যারা কাগজপত্র দেখিয়েছে। যাদের তথ্য যাচাই করে তবে নাম তুলেছে।’’
অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গেও শাহকে পাল্টা বিঁধে মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলায় শুধু অনুপ্রবেশকারী! কাশ্মীরে নাকি নেই। তা-ই যদি সত্যি হয়, একটা কথার উত্তর চাই—পহেলগাম কি তবে আপনারা করলেন? দিল্লিতে কিছু দিন আগে যে ঘটনা ঘটে গেল? যত দোষ বাংলার? যত সব রাজনৈতিক হ্যাংলার দল!’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আগের বার এসে বলেছিল, ইস বার দোশো পার। হয়েছে পগারপার! শুধু তুমি খাবে আর তোমার ছেলে খাবে? আর আমাদের নামে গালাগালি চলবে কত দিন!’’
দুর্নীতির প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘দুঃশাসনবাবু! বড় বড় ভাষণ দিচ্ছেন, উত্তর দিন। (কাগজ দেখিয়ে) এটা আপনার আরটিআই-এর জবাব থেকে পড়ছি। আমাদের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে প্রশ্ন করেছিল। আধার কার্ড করতে আপনাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল তো! যদি আমার মন্ত্রীরা চার জন চুরি করে থাকে, আপনি জেল খাটিয়েছেন চার-পাঁচ বছর। আপনার ক’জন মন্ত্রীকে জেল খাটিয়েছেন? আপনি ক’বার জেল খেটেছেন, এত লোককে খুন করার জন্য?’’ মমতার সংযোজন, ‘‘নিজের বেলায় স্বার্থসিদ্ধি,আর অপরের বেলায় ঘেঁচু। আপনাকে এ বার বাংলার মানুষ দেবে ঘেঁচু! তৈরি থাকুন।’’
শাহকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন দিল্লি যাওয়ার পথে কলকাতায় বলেছেন, ‘‘উনি রাজ্যে এসেছেন। এখানকার শীত উপভোগ করুন। আলু-পোস্ত ভাত খান। রসগোল্লা খান। তিন মাস পরে রাজ্যের মানুষ এমনিতেই ওঁকে লাড্ডু দেবে! দিল্লির থেকে কলকাতার পরিবেশ ভাল। আপনি প্রাণ ভরে শ্বাস নিন। প্রাণায়াম করুন। শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সারা বছর বাংলায় আসুন।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি ও তৃণমূল, দুই শাসককেই আক্রমণ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল বাংলার মানুষকে ডুবিয়েছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি হবে কী ভাবে? তারা একই মুদ্রার দুই পিঠ! বিজেপি গোটা দেশে যা করে, সেই একই বই খুলে তৃণমূল এই রাজ্যে গণতন্ত্রের অবমাননা এবং সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে