নবরূপে: সংস্কার শেষ। বাগবাজারে ভগিনী নিবেদিতার বাড়ির উদ্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে শশী পাঁজা। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
চার বছর আগে বাড়িটি অধিগ্রহণ করে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার সেই বাড়ির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে ঘুরে দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ভাবে বাড়িটির সংস্কার করা হয়েছে তা দেখে খুবই ভাল লাগছে।’’
১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের ওই বাড়িটির উঠোনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সেই রোয়াক স্পর্শ করেন যেখানে স্বামী বিবেকানন্দ এসে বসেছিলেন। দোতলায় নিবেদিতার শয়ন কক্ষে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন বাগবাজারে ওই বাড়ির সামনেই আয়োজন করা হয়েছিল উদ্বোধন অনুষ্ঠানের। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিবেদিতা মানে নিবেদিত প্রাণ। তিনি পরাধীন ভারতকে নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নারী শিক্ষার প্রসার, সমাজ সেবা ও মূল্যবোধে নিবেদিতার অবদান আমাদের উৎসাহ দেয়।’’
আরও পড়ুন: নিবেদিতার জন্মদিন পালন রামকৃষ্ণ মিশনেও
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, কী ভাবে তিনি এক সময় দখল হয়ে যাওয়া নিবেদিতার ওই বাড়ি মুক্ত করে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি জানান, এক দিন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়িতে তিনি আচমকাই হাজির হয়েছিলেন। এমনকী ভাড়াটেকেও বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এরপরেও বিভিন্ন রকমের জটিলতা তৈরি হতে শুরু করলে ২০১৩ সালে রাজ্য সরকার তা অধিগ্রহণ করে ওই বছরই রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের হাতে তুলে দেয়।
বাগবাজারের ওই বাড়ি ছাড়াও সিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটে, দার্জিলিংয়ে ভগিনী নিবেদিতার ‘রায় ভিলা’ কী ভাবে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দিয়েছে, এ দিন সে বিষয়ের উপরেও আলোকপাত করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কোন সময় কী ভাবে অধিগ্রহণ করা হল, কী ভাবে তা রক্ষা করা হচ্ছে তা আগামী প্রজন্মের জানা দরকার।’’
এ দিন নিবেদিতা এবং ওই বাড়িটির সংস্কারের উপর বাংলা ও ইংরাজীতে লেখা কয়েকটি বই প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রী সারদা মঠ ও শ্রী রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সাধারণ সম্পাদিকা প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণা বলেন, ‘‘আজ খুবই আনন্দ লাগছে, পরম তৃপ্তি লাভ করছি। চরম ব্যস্ততার মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী আমাদের মধ্যে এসেছেন এর জন্য আমরা চির কৃতজ্ঞ।’’
১৮৯৮ সালের নভেম্বরে বোসপাড়া লেনের ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন নিবেদিতা। পুরাতন স্থাপত্যকলার নিদর্শনের ওই বাড়িটি নিবেদিতার কাছেও খুব প্রিয় ছিল। তাই তিনি লিখেছিলেন, ‘‘মাই হোম ইজ, ইন মাই আইজ, চার্মিং’’।
ওই বাড়িতেই ১৮৯৮ সালের ১৩ নভেম্বর নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেছিলেন শ্রী সারদা দেবী। বাড়িটি সারদা মিশনের হাতে আসার পরেই হেরিটেজ নিয়ম মেনে পুরাতন স্থাপত্যকলার নিদর্শন আগের মতোই রেখে দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়। বাড়িটিতে নিবেদিতা সংগ্রহশালা তৈরি করা হবে বলেই জানান সারদা মিশন কর্তৃপক্ষ।