তাঁর খুশির মেজাজে মাঝেমাঝেই তাল কাটছে। কারণ পাহাড়। সমুদ্রতল থেকে তিন ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার এই শহরে বসেও তাই তাঁর মন পড়ে রয়েছে ৬ হাজার ৭০০ ফুট উপরে।
সারাক্ষণ ফোনে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রতি মুহূর্তে আসছে রাজ্যের আপডেট। চলছে নির্দেশ দেওয়ার কাজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আজকের পৃথিবীতে দূরত্ব কোনও ব্যাপার নয়। প্রতি সেকেন্ডে আমাকে রাজ্যের পরিস্থিতি মনিটর করতে হচ্ছে।’’ রাজ্য মানে বিশেষ করে দার্জিলিঙের পরিস্থিতি। যা তাঁকে ভাবাচ্ছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির সর্বদল বৈঠকে কী হতে পারে, তা নিয়েও ভেবে যাচ্ছেন তিনি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মেলনে যোগ দিতে এসেও তাই হোটেলের লবিতে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রধান সচিব গৌতম সান্যালকে নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন পাহাড়ের পরিস্থিতি। নবান্নে ফোন করে জেনেছেন কী হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশের প্রধান মুখ্যমন্ত্রীকে যে রিপোর্ট দিয়েছেন তাতে পাহাড়ে হিংসা থামার এখনই কোনও লক্ষণ নেই। সিকিম, ভূটান, নেপাল থেকে এই হিংসায় মদত দেওয়ার কথাও রাজ্য গোয়েন্দারা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। ফলে হিংসা থামাতে এখনই পুলিশ প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মনে করছেন এর পিছনেও রয়েছে বিজেপির ‘খেলা’। রাষ্ট্রপতি ভোটে এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন না করার জন্যই পাহাড়ে অশান্তির আগুন জ্বালাচ্ছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: জিটিএ ছাড়ছেন গুরুঙ্গরা
বিদেশ যাত্রার আগে দ্বিমুখী রণকৌশলে শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হন মুখ্যমন্ত্রী। এক, লেপচা বোর্ডের প্রধান এল তামসাঙ্গকে মাথায় রেখে ১৫টি বোর্ডের প্রধানের সমন্বয় কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। এঁদের মাধ্যমেই পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই বৈঠকের পরই তামসাঙ্গের বাড়িতে হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছে। পাহাড়ে থাকতে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। এ বার বোর্ড প্রধানদেরও গোর্খাল্যান্ডের
সমর্থনে মুখ খুলতে চাপ দিচ্ছে মোর্চা। দ্বিতীয়ত, সরকারি ভাবে স্বরাষ্ট্র সচিব মলয় দে’কে শিলিগুড়ি পাঠিয়ে সর্বদল বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ দিন মোর্চা পাল্টা বৈঠক ডেকে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ প্রত্যাহার না হলে তাঁরা কেউ বৈঠকে আসবেন না। সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন উঠে যেতে পারে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিনই হাওড়ার সাঁকরাইলে গিয়ে দার্জিলিং সমস্যার যাবতীয় দায় ফের মমতার উপরেই চাপিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চলে গিয়েছেন নেদারল্যান্ডসে।’’