WB Panchayat Election 2023

কেন্দ্রীয় বাহিনীকে হাতা-খুন্তি দিয়ে আলুভাজা খাওয়ান: মমতা

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৫০ দিনের জনসংযোগ কর্মসূচি এ দিন শেষ হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সেই উপলক্ষে কাকদ্বীপের ইন্দিরা ময়দানে অনুষ্ঠিত সভায় হাজির ছিলেন মমতাও।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৭:২১
Share:

কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোকাবিলায় মা-বোনেদের ‘হাতা-খুন্তি’ নিয়ে তৈরি থাকার পরামর্শ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোকাবিলায় মা-বোনেদের ‘হাতা-খুন্তি’ নিয়ে তৈরি থাকার পরামর্শ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কাকদ্বীপে দলীয় সমাবেশে তৃণমূলনেত্রীর বার্তা, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে মা-বোনেরা হাতা খুন্তি দিয়ে আলুভাজা, ভাত-আলুসিদ্ধ খাইয়ে দেবেন। বুঝেছেন?’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘সারা বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী বলে দিল ( হাই কোর্ট), চলে এসো ঢাল তরোয়াল নিয়ে! কাঁচকলা করবে ঢাল, তরোয়াল নিয়ে।’’

Advertisement

ওই মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এ রাজ্যের মতো শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন পেশ আর কোনও রাজ্যে হয় না। তবে মমতার এই অবস্থানকে দুর্ভাগ্যজনক ও গণতন্ত্র-বিরোধী বলে চিহ্নিত করেছে বিরোধী দলগুলি। প্রায় এক সুরেই বিরোধীদের বক্তব্য, মনোনয়ন-পর্বে যা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর মতে তা শান্তিপূর্ণ হলে ভোটের দিন কী হবে, বোঝা যাচ্ছে।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৫০ দিনের জনসংযোগ কর্মসূচি এ দিন শেষ হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সেই উপলক্ষে কাকদ্বীপের ইন্দিরা ময়দানে অনুষ্ঠিত সভায় হাজির ছিলেন মমতাও। সেখানেই পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকে শুরু হওয়া হিংসা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। মনোনয়ন-পর্বের অশান্তির অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘৬১ হাজার বুথের মধ্যে দু’টো বুথের গন্ডগোল নিয়ে চিৎকার করে বেড়াচ্ছ! পরিবারে মা-ভাই-বোন থাকলেও, থালা বাসন থাকলেও কখনও ঠোকাঠুকি হয়, পরিবার মিটিয়ে নেয়।’’ নির্বিঘ্নে মনোনয়ন পেশের পক্ষে তাঁর যুক্তি, ‘‘কত মনোনয়ন জমা হয়েছে কাল? ২ লক্ষ

Advertisement

৩১ হাজার মনোনয়ন জমা পড়েছে। একক ভাবে তৃণমূল জমা দিয়েছে ৮২ হাজার। আর বিরোধীরা দিয়েছ, দেড় লক্ষ।’’ তাঁর কথা, ‘‘ভাত দিয়েছি। এখন বলছে, মাংস দাও। ইলিশ মাছ দাও।’’

সামগ্রিকতার বিচারে এ বারের অশান্তি যে খুব বড় কিছু নয়, তেমনই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বরং তিনি বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ করছি, পঞ্চায়েতে এত রাজনৈতিক লড়াই করে এ রকম একটা রাজ্য দেখান যেখানে এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন জমা হয়।’’ এই অশান্তির দায় সরাসরি বিরোধীদের দিকে ঠেলে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘রাম, বাম, শ্যাম আর কিছু গুন্ডা— এই চারটে পার্টি গিয়ে লাগাচ্ছে, তৃণমূল চুলকোচ্ছে। তৃণমূল রাম চিমটি দিচ্ছে, শ্যাম চিমটি দিচ্ছে, দে চিমটি দিচ্ছে। বলছে, বাংলায় শান্তি নেই। কারা বলছে এ সব! সারা বাংলাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দাও।’’ মমতা বলেন, “মণিপুরে তো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছিলে। কী করেছে? ১৫০ লোক মারা গিয়েছেন।” এই সূত্রে শীতলখুচিতে বিধানসভা নির্বাচনের সময় মৃত্যুর ঘটনাও মনে করিয়ে দেন তিনি। অভিষেকও দাবি করেন, শান্তিপূর্ণ ভাবেই মনোনয়ন জমা হয়েছে।

বিরোধীরা অবশ্য একযোগে আঙুল তুলেছে শাসক তৃণমূলের দিকেই। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ হলে এত লোক মারা গেলেন কী করে? বিরোধীরা করলে আটকালেন না কেন? নির্বাচনে হিংসার গোটা দায়িত্ব ওঁর।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেন কোনও খুনের সঙ্গে তৃণমূল জড়িত নয়, তখন কোন পুলিশের ক্ষমতা আছে যে, সত্যি রিপোর্ট দেবে? চোপড়ায় কী ঘটনা ঘটেছে? পরিকল্পিত ভাবে খুন-সন্ত্রাস করতে তৃণমূলকে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ।’’ আর সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘মনোনয়নের সময়েই তৃণমূল বোমা-গুলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, আর এটা উনি বলছেন শান্তিপূর্ণ! এখনও নির্বাচন বাকি আছে। আসলে এই অশান্তিকেই উনি শান্তি মনে করেন!’’

বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘সিপিএমের আমলে কোন শান্তি ছিল? শ্মশানের শান্তি? সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম তো শেষে এসেছে। তার আগে কত গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে! কত অত্যাচার!’’ সব বিরোধী দলকে এক বন্ধনীতে রেখে স্লোগানের সুরে তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের কোলে বিজেপি দোলে, বিজেপির কোলে কংগ্রেস দোলে।’’ ভাঙড়ের অশান্তি প্রসঙ্গে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী সম্পর্কে মমতা আরও বলেন, ‘‘এক জন বিধায়ক হয়ে বড় বড় কথা বলছেন। বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে, মানুষ মেরে নেতা হতে চাইছেন।’’ অভিষেকও বলেন, ‘‘আশি-নব্বইয়ের দশকে কী ভাবে পঞ্চায়েত ভোট হতো, তা আমরা দেখেছি। সিপিএম সুপরিকল্পিত ভাবে সন্ত্রাসকে বাংলার রাজনীতিতে ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে। কেউ মনোনয়ন দিতে পারত না।’’

বিরোধীদের জামানত বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূল না থাকলে আপনাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার কে দেবে?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলে যাঁরা আছেন, তাঁরা সম্পদ। আর বিজেপিতে আছে আপদ। সেই আপদ বিদায় করতে হবে।’’ এ দিনের সভায় রাজ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে বিজেপির দিকে আঙুল তোলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন