নজরকাড়া ১০ মিনিট, মুগ্ধ পিসিও

রাজনৈতিক মহলে অনেকেরই মত, ভাইপোকে উত্তরসূরি তৈরি করতে চাইছেন নেত্রী। এ দিনের ‘সফল’ সমাবেশ তাকে কিছুটা এগিয়ে দিল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় এ দিন ছিল জাতীয় রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপট। আর অভিষেকের বৃত্ত মূলত রাজ্য-রাজনীতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৩
Share:

দলগত: এক ফ্রেমে মমতা, সোহম, শুভেন্দু এবং অভিষেক। ছবি: প্রদীপ আদক।

উনি যখন বলছেন, তিনি তখনও মঞ্চে পৌঁছননি। কিন্তু ভাইপোর বক্তৃতার পরতে পরতে পিসির ‘ছাপ’ নজর এড়ায়নি। এবং এভাবেই চিহ্নিত হল ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দশ মিনিটের ভাষণ। যার সবটা জুড়ে ছিল রাজ্যে তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রীর জয়গান। ছিল এই সরকার এবং দলের বিরুদ্ধে যে কোনও রকম রাজনৈতিক ‘চক্রান্ত’ ব্যর্থ করে দেওয়ার কড়া চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

বরাবরই এই সমাবেশ হয় দলের যুব সংগঠনের নামে। যুব তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে তাকে সফল করার অনেকটা ভার তাই স্বাভাবিকভাবেই অভিষেকের ওপর বর্তায়। মাস কয়েক আগে গাড়ি দুর্ঘটনার আঘাত, বার দুয়েক অস্ত্রোপচারের ধকল সামলে উঠেছেন। তার মধ্যে শহিদ সমাবেশে লক্ষ লক্ষ লোক আনার চ্যালেঞ্জ। গত এক মাস ধরে জেলার পর জেলা চষে প্রস্তুতি সেরেছেন। শেষমেশ শুক্রবার ধর্মতলায় জনারণ্য দেখে শুরুতেই প্রকারান্তরে ভাইপো অভিষেকের তারিফ করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘এ তো জনবিপ্লব, গণসমুদ্র, গণঢেউ!’’

রাজনৈতিক মহলে অনেকেরই মত, ভাইপোকে উত্তরসূরি তৈরি করতে চাইছেন নেত্রী। এ দিনের ‘সফল’ সমাবেশ তাকে কিছুটা এগিয়ে দিল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় এ দিন ছিল জাতীয় রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপট। আর অভিষেকের বৃত্ত মূলত রাজ্য-রাজনীতি। সাম্প্রদায়িক গোলমালে উস্কানি দিয়ে বা সারদা-নারদের মতো একের পর এক দুর্নীতিতে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলকে থামিয়ে রাখা যাবে না বলে বারবারই বিজেপিকে আক্রমণ করেন মমতা। রাজ্যে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ এবং বিজেপি বিরোধিতায় প্রচারের অভিমুখ তৈরি করে দিয়ে নেত্রীর কথার ধাঁচেই তাঁর হুঁশিয়ারি: ‘‘আমাদের ধমকিয়ে চমকিয়ে থামিয়ে রাখা যাবে না। তৃণমূল বিশুদ্ধ লোহা। একে যত পোড়াবে, তাতাবে, আঘাত করবে, তত বলিষ্ঠ হবে।’’ দার্জিলিং পরিস্থিতি এবং বসিরহাট-প্রসঙ্গের উল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দু’একটা বন্‌ধ ডেকে আর ধর্মের ভিত্তিতে উত্তেজনা তৈরি করে বাংলাকে ভাগ করা যাবে না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বাংলা থেকে একটা সিটও পেতে দেব না বিজেপিকে: চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন মমতা

বছর দুয়েক আগে ‘ভাগ মমতা ভাগ’ বলে মমতাকে আক্রমণ করেছিলেন বিজেপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। সে প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক এ দিন বলেন, ‘‘ভাগ মমতা ভাগ বলেছিলেন যাঁরা, তাঁদের এখন আর অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ তবুও এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী সিপিএম এবং বিজেপির মোকাবিলায় লড়াই চালাতে হবে বলে অভিষেক নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘সিপিএমের হার্মাদ আর বিজেপির উন্মাদদের সঙ্গে আমাদের লড়তে হচ্ছে। এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বেন না।’’ অভিষেকের বক্তৃতার সময়ে মঞ্চে না থাকলেও পরে সব শুনে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি ভাইপোর বক্তৃতার প্রশংসাই করেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।

রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে দলকে যে আরও আক্রমণাত্মক প্রচার করতে হবে, তার ইঙ্গিত দিয়ে অভিষেক কেন্দ্রের ব্যর্থতাকে তুলে ধরলেন এ রাজ্যের কৃতিত্বকে সামনে রেখে। কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে না পারা, বা দেশের প্রত্যেক মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দিতে না পারা বা দুর্নীতি মামলায় বিজয় মাল্যকে গ্রেফতার করতে না পারার জন্য কেন্দ্রকে দোষারোপ করেন অভিষেক। পাশাপাশি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এসে কী ভাবে সিঙ্গুরের জমি ফেরত দিয়েছেন মমতা, কী ভাবে সারদা-কাণ্ডে সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করেছেন, কী ভাবে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন, তারও উল্লেখ করলেন। এই কেন্দ্র-রাজ্যের প্রসঙ্গেই নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর মমতার প্রাপ্তি নিয়ে তুলনামূলক তত্ত্বও দেন অভিষেক। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দ্য হেগ শহরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী একটা সাইকেল নিয়ে ফিরেছিলেন। আর মুখ্যমন্ত্রী ফিরেছেন কন্যাশ্রীর জন্য বিশ্বসেরার শিরোপা নিয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন