অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী।
এতদিন চর্চা হত নেত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ত্রয়ীকে নিয়ে। শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম ( ববি) ও অরূপ বিশ্বাস।
শুক্রবার তৃণমূলের ছাত্র-যুব সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং সামনে নিয়ে এলেন শুভেন্দু অধিকারীর নাম। জানালেন দলের আগামী প্রজন্ম তৈরি করে দেওয়ার কাজ করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু।
তৃণমূলের নেতৃত্বে অভিষেকের অভিষেক হয়েছে আগেই। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও তাঁর প্রভাব স্পষ্ট হওয়াও শুরু হয়েছে। এবার তাঁর সঙ্গে শুভেন্দুর নাম জুড়ে যাওয়ার পরে স্বভাবতই দলের অন্দরে গুঞ্জন: ক্ষমতার ভরকেন্দ্র বদলাচ্ছে? কী হবে পুরনো ত্রয়ীর? সংগঠনের মাথায় বসে থাকা আরও দুই প্রবীণ নেতা সুব্রত বক্সী এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থানই বা কোথায় দাঁড়াবে?
নেত্রীর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাশিতভাবেই মুখে স্বাগত জানাচ্ছেন সবাই। শনিবার দলের মহাসচিব পার্থবাবু যেমন হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘ভালই তো! রাজনীতি ও প্রশাসন পরিচালনায় নতুনত্বই মমতার বৈশিষ্ট্য। তাই নতুন প্রজন্মের নেতাদের তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। এখন তাঁদের স্বীকৃতি দিচ্ছেন।’’ শোভনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি তো ১৬-১৭ বছর বয়সে মমতাদির হাত ধরেই রাজনীতি শুরু করেছি। চলতে চলতে এতগুলো দিন পেরিয়ে এলাম। আগামী প্রজন্ম তৈরির এত সুদূরপ্রসারী ভাবনা আর কারও নেই।’’ ববিও বলেন, ‘‘বামেরা যেমন প্রবীণদের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে, মমতাদি সেই ভুল কোনওদিনই করবেন না। দিদি জানেন, তরুণদের তৈরি করে দিতে হবে। আমরা আর কতদিন! ’’ প্রতিক্রিয়া দিতে একমাত্র সাবধানী অরূপ। তিনি ‘দিদির সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা’য় নারাজ বলে জানিয়েছেন।
দলের ভিতরে অবশ্য আলোচনা তাতে থেমে নেই। দলের অনেকেই মনে করছেন, অভিষেক অনিবার্যই ছিলেন। তবে শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়ে এবং তাঁকে অভিষেকের সঙ্গে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের মুখ হিসাবে একই বন্ধনীতে এনে মমতা অভিষেককেও ‘চাপমুক্ত’ রাখার কৌশল নিলেন।
তাঁর এই ‘উত্থান’কে কীভাবে দেখছেন শুভেন্দু? তিনি বলেন, ‘‘আমি ১৯৯৯ সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তিনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করব। এ সব নিয়ে বলার কী আছে!’’
দলের একটি বড় অংশ অবশ্য মনে করছেন, তৃণমূলের শুরু থেকে শেষ মমতাই। ফলে এ নিয়ে সব অঙ্কই অর্থহীন। দল ও সরকারের মুখ হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় পার্থকে ব্যবহার করেন তিনি। আর সংগঠনের ভিতরের ঝাড়াই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন সুব্রতর হাতে। আগামিকাল সোমবার শিলিগুড়ির ছাত্র-যুব সমাবেশে মমতা নিয়ে যাচ্ছেন সুব্রতকে। দলনেত্রীর সম্মতিতেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজও শুরু করে দিয়েছেন সুব্রত।