তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর রবিবারই প্রথম উত্তরবঙ্গে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গটা প্রথম তুলেছিলেন বিজেপির সাংসদ জন বার্লা। এবং তুলেছিলেন বিধানসভা ভোটে বিজেপি পর্যুদস্ত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই। তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর রবিবারই প্রথম উত্তরবঙ্গে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসে প্রথম জনসভা থেকেই পাল্টা বার্তা দিয়ে জানালেন, বাংলায় ভাগাভাগি নয়। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নয়। সোনার বাংলা আপনার-আমার সবার বাংলা।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জবাবে বলেন, ‘‘ওঁর মুখে ঐক্যের কথা মানায় না।’’
উত্তরবঙ্গের চার জেলার ক্লাবগুলিকে নিয়ে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। এই চার জেলা হচ্ছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার। গত বিধানসভা ভোটে এই চার জেলাতেই বিজেপি ভাল ফল করেছে। তার মধ্যে দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ার জেলায় তৃণমূল একটিও আসন পায়নি। যদিও সামগ্রিক ভাবে বিধানসভা ভোটে কার্যত পর্যুদস্ত হয়েছিল বিজেপি। ভোটের ফল প্রকাশের পরেই প্রথম উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রসঙ্গ সামনে আসে। এক সময়ে জন বার্লা নিয়মিত প্রকাশ্যে সে কথা বলতেও থাকেন। কিন্তু তাতে গোটা রাজ্যে রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হতে পারে ধরে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে এমন অবস্থান থেকে সরে আসেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরে রাজ্যে ফিরলে বার্লাকেও এই সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে দেখা যায়। মনে করা হয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই তাঁর আপাতত এই অবস্থান বদল। যদিও এই প্রসঙ্গ উঠলে ‘বঞ্চনার বিরুদ্ধে জনগণের দাবি’ বলে বিষয়টিকে পুরোপুরি উড়িয়েও দেন না বিজেপি নেতারা।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী এলে তাঁর কাছ থেকে বার্তা আশা করছিলেন অনেকেই। মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রসঙ্গেই এ দিন রাজ্যের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘যদিও এই বৈঠক চার জেলাকে নিয়ে, কিন্তু মালদহ, দুই দিনাজপুর থেকেও এখানে প্রতিনিধিরা আছেন।’’ তার পরে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য বিপ্লব মিত্র, গোলাম রব্বানি এবং সাবিনা ইয়াসমিনের নাম করেন। তিনি সকলকে ছন্দে ছন্দে থাকতে বলেন, বেসুরো না হতেই বার্তা দেন। মমতা বলেন, ‘‘আমরা সবাই এক। সবাই এক হয়ে থাকলে পরিবারে শান্তি, সুখ, স্বস্তি আসে। আর বিভক্ত হলে কেউ কারও দিকে দেখে না। কারও সমস্যায় পাশে থাকে না। এটা আমরা চাই না। আমরা মানবিক সমাজ, বাংলা চাই।’’
এর আগে পাহাড়ে একাধিকবার পৃথক রাজ্যের দাবিতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছে। কখনও তার নেতৃত্ব দিয়েছেন সুবাস ঘিসিং, কখনও বিমল গুরুং। কিন্তু এখন গুরুং তৃণমূলের সঙ্গে। এ দিন মঞ্চে ছিলেন অনীত থাপাও। যদিও পাহাড় প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, ‘‘পাহাড়ে তো উনিই বোর্ড তৈরি করে বিভিন্ন বিভেদ তৈরি করেছেন। আমরা মানুষের কথা বলি।’’