আত্রেয়ী: বালির চড়ায় গতি হারিয়েছে নদী। বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত
গরম পড়তেই ধু-ধু বালির চর জেগে ওঠে। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও বা তা-ও নেই। আত্রেয়ী যেন মরা নদী। শীর্ণ এই আত্রেয়ীর সমস্যা নিয়েই ২৪ ঘণ্টা আগে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশে বাঁধ দেওয়ার জেরে আত্রেয়ী শীর্ণ হয়ে পড়ছে— বালুরঘাটবাসী এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করছেন। আবার বাংলাদেশে তিস্তার জল বন্টন চুক্তি নিয়ে আপাতত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিপরীত অবস্থানে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, রুগ্ণ তিস্তার জল বাংলাদেশকে দিলে কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে চাষের জল থাকবে না। এ বার তিস্তার পাল্টা আত্রেয়ীর জলসঙ্কট নিয়ে দিল্লিতে চাপ বাড়াতে তৎপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢাকার দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি আত্রেয়ীর সঙ্কট কাটাতে মূল ভূমিকা যে দিল্লিকেই নিতে হবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
বুধবার বুনিয়াদপুরের সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ও পারে বাঁধ দিয়ে জল আটকানোয় বালুরঘাটে জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। কখনও ও দিকে জল বেড়ে গেলে হঠাৎ করে জল ছেড়ে দেওয়ায় এপারে খেতের ফসল ভেসে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’’ বিষয়টি আন্তর্জাতিক বলে মন্তব্য করে তিনি দিল্লির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। বুধবার বুনিয়াদপুরের সরকারি বৈঠকে আত্রেয়ী নিয়ে জেলার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি এ নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনাও করেন। বালুরঘাটের আরএসপি-র বিধায়ক বিশ্বনাথ চৌধুরীর কথায়, ‘‘শুধু চিঠি দিলেই হবে না, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলতে হবে। বাংলাদেশ জল আটকে দেওয়ায় বালুরঘাট শুকিয়ে যাচ্ছে। মাথায় হাত মৎস্যজীবীদের!’’
দক্ষিণ দিনাজপুরের দীর্ঘতম নদী আত্রেয়ী। দৈর্ঘ প্রায় ৫৮ কিলোমিটার। এ পারে সমজিয়া সীমান্ত থেকে ১৪০০ মিটার দূরে বাংলাদেশের মোহনপুরে আত্রেয়ীর উপর আড়াআড়ি বাঁধ ও লকগেট তৈরির ফলে গত দুবছর ধরে এ পারে জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। জেলা কৃষি সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার সিদ্ধার্থ মজুমদারও বলেন, ‘‘কুমারগঞ্জ থেকে বালুরঘাট, আত্রেয়ীর ওই ৫৮ কিমি পথে ৫৫টি রিভারলিফ্ট ইরিগেশন (আরএলআই) কেন্দ্রের মাধ্যমে বছরে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় রয়েছে। গরমের সময় নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় আরএলআইয়ের মাধ্যমে জলসেচ দেওয়া যাচ্ছে না। মৎস্যজীবীরাও সঙ্কটে পড়ছেন।’’
তিস্তা নদী দার্জিলিং পাহাড় থেকে নেমে আসার পর জলপাইগুড়ি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় দক্ষিণ দিক থেকে তিস্তার তিনটি শাখানদী বেরিয়েছে। এর মধ্য-ভাগের শাখাটি ছিল আত্রেয়ীর উৎস। পরে এক বিধ্বংসী বন্যা ও বিরাট ধসে তিস্তার গতিপথ বদলে যায়। তিস্তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে যায় আত্রেয়ীর। ফলে আত্রেয়ী তার প্রধান জলধারা থেকেই বঞ্চিত হয়ে যায়। কিছুটা বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর দিক থেকে এই জেলার কুমারগঞ্জের সমজিয়া সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে আত্রেয়ী। এর পরে ডাঙি সীমান্ত দিয়ে ফের ঢুকেছে বাংলাদেশে। এ বছর কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় অন্য বছরের মতো এ বার আত্রেয়ী একেবারে মরা নদীতে পরিণত হয়নি। তবুও সেই আত্রেয়ী আর নেই।