পুরস্কার উৎসর্গ করলাম ৪০ লক্ষ কন্যাকে: মমতা

সবাইকে পিছনে ফেলে রাষ্ট্রপুঞ্জে শিরোপা কন্যাশ্রীর

শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের জন পরিষেবা ফোরামের সভাগৃহে ছিলেন সারা বিশ্বের ১২০০ প্রতিনিধি। অধিকাংশই বিচক্ষণ এবং অভিজ্ঞ আমলা। মঞ্চে ১১ জন মন্ত্রী। সেখানেই আড়াই মিনিটে ‘যা বলার বলুন’ ধাঁচের বক্তৃতা করার এবং নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

দ্য হেগ শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০৫:২৪
Share:

স্বীকৃতি: রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত কন্যাশ্রী প্রকল্প। পুরস্কার হাতে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

এ যেন আড়াই মিনিটে বিশ্বজয়!

Advertisement

শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের জন পরিষেবা ফোরামের সভাগৃহে ছিলেন সারা বিশ্বের ১২০০ প্রতিনিধি। অধিকাংশই বিচক্ষণ এবং অভিজ্ঞ আমলা। মঞ্চে ১১ জন মন্ত্রী। সেখানেই আড়াই মিনিটে ‘যা বলার বলুন’ ধাঁচের বক্তৃতা করার এবং নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই। আর তাতেই বাজিমাত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আড়াই মিনিটেই জানিয়ে দিলেন জন পরিষেবার আসল কথাটা। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘জন পরিষেবার মূল কথা জনগণকে বোঝা। নেতৃত্ব তৃণমূলস্তরে পৌঁছনো। সব সময় পাশে দাঁড়ানো। সাত বছরে ৩০০ প্রশাসনিক বৈঠক করেছি। রাজ্যের ন’কোটি মানুষের জন্য জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব স্তরেই কোনও না কোনও প্রকল্প করেছি।’’

এর পর একে একে বলে গেলেন তাঁর ‘শ্রী’ সিরিজের প্রকল্পগুলির কথা। যার একটি ‘কন্যাশ্রী’ এ দিন সেরার সেরা শিরোপা পেল। ৬২টি দেশের ৫৫২টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। ‘কন্যাশ্রী’ সবাইকে পিছনে ফেলল। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘যে ৪০ লক্ষ কন্যা এই প্রকল্পের সুবিধা পায়, এই পুরস্কার তাদেরই উৎসর্গ করলাম।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:পুরস্কার স্বাগত বলেও খোঁচা বিরোধীদের

সভাগৃহে তখন গুঞ্জন, কোথা থেকে এসেছেন এই ছোট্টখাট্ট চেহারার নেত্রী! বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি-মন্ত্রীরা বলার পর গোটা আষ্টেক প্রশ্ন এল। তার মধ্যে দু’জনের মুখে ঘুরে ফিরে এল ‘মিস মমতার’ কথা। ডাচ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্ণধার বললেন, ‘‘জয়দেব কেঁদুলিতে গরিব মেয়েদের নিয়ে আমাদের প্রকল্প চলে। আমরা তাদের প্রত্যক্ষ ভাবে জানি। জানি দিদি কত জনপ্রিয়।’’ অন্য জন আবুধাবির এক সংস্থার প্রতিনিধি সভাকে জানালেন, জন পরিষেবার মূল কাজ হল মানুষ কতটা সুখে আছে তা দেখা। দিদির রাজত্বে মানুষের সুখ বেড়েছে বলেই তাঁদের ধারণা।

এ দিন মন্ত্রিগোষ্ঠীর সভায় সুযোগ পেলেই চটজলদি মাইক ধরে রাজ্যের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জন-পরিষেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে নীতিগত অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে দিদির দক্ষতা অবাক হয়েছেন ভারতীয় প্রতিনিধিরাও। স্যুট-বুট, স্কার্ট-কোটের সভায় তাঁতের কাপড়, হাওয়াই চটি আর সাদা শালের নেত্রীকে সকলেই তখন আলাদা করে চিনে নিয়েছেন। মঞ্চে বসা মন্ত্রীদের অনেকেই আড়চোখে দেখছিলেন তাঁর হাওয়াই চটিখানি। অবাক হচ্ছিলেন।

অবাক হওয়ার অবশ্য তখনও বাকি। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের প্রথম দিন কন্যাশ্রী প্রকল্পটি প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। পুরস্কার মিলতে পারে বলে গুঞ্জনও ছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল টমাস গ্যাশ তাঁর দু’দফার বক্তৃতায় মমতা এবং নাবালিকা বিয়ে রুখতে কন্যাশ্রীর কথা উল্লেখ করায় আশা জেগেছিল বাংলার প্রতিনিধিদের মনে। সম্মেলনের শেষে সঞ্চালক যখন ঘোষণা করলেন জন পরিষেবায় অভিনবত্বের জন্য কন্যাশ্রীই প্রথম পুরস্কার পাচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর চোখের কোণও আনন্দে চিকচিক করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন