হলটা কী: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) ও মুখ্যসচিব মলয় দে। পাশে মুকেশ অম্বানী। বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে। ফাইল চিত্র।
এত দিন বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বাংলায় বিনিয়োগের ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে শিল্পপতিদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যের জন্যও লগ্নি চাইলেন তিনি। একই সঙ্গে, রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী, আদানি গোষ্ঠীর করণ আদানি প্রমুখদের মঞ্চে বসিয়েই বার্তা দিলেন, কেন্দ্রে সরকার বদল সময়ের অপেক্ষা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে যাওয়া আবহে এ দিনের বক্তব্যে জোড়া বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা। প্রথমত শিল্পপতিদের বোঝাতে চেয়েছেন, বিজেপি সরকার যে বিভিন্ন ভাবে তাঁদের উপরে চাপ তৈরি করে, সে বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল। কিন্তু তা নিয়ে চিন্তার তেমন কারণ নেই। কেন্দ্রে সরকার বদল আসন্ন। স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। অর্থাৎ এখন বিজেপির ছত্রচ্ছায়া থেকে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে আসতে পারেন তাঁরা। আর দ্বিতীয়ত বোঝাতে চেয়েছেন, শুধু একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গণ্ডিতে আর তাঁর পরিচিতি আটকে নেই। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, নিজেকে জাতীয় নেত্রী হিসেবে তুলে ধরার ছাপ তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট।
মমতা বলেছেন, তিনি চান, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি শিল্পপতিরা গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ সব রাজ্যে লগ্নি করুন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চাই...আমার গুজরাত, আমার ঝাড়খণ্ড, ...আমার তামিলনাড়ু,... দেশের সব রাজ্য সমৃদ্ধ হোক।’’ রাজনৈতিক মহলের মতে, অন্য রাজ্যকে ‘আমার’ বলে সম্বোধন মমতা আগেও করেছেন। কিন্তু এই ভোট-বাজারে তা বাড়তি গুরুত্ব দাবি করে। বিশেষত প্রথমে ব্রিগেড সভা এবং তার পরে সিবিআই ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে তেতো চাপানউতোরে যখন মোদী বিরোধী রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে তাঁর পদক্ষেপকে ঘিরে। যে-ভাবে তাঁকে জাতীয় নেত্রী হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন সব বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারাই ।
আরও পড়ুন: লগ্নিতে ধারাবাহিকতার আশ্বাস শিল্প মহলের
নোটবন্দি এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালু— জোড়া ধাক্কায় শিল্প (বিশেষত ছোট শিল্প) যে জোর ধাক্কা খেয়েছে, তা বিলক্ষণ জানেন মমতা। ঠিক সেই নাড়ি টিপেই শিল্পকে বার্তা দেন তিনি। অম্বানী, আদানিদের সামনেই বলেন, ‘‘জানি বহু ক্ষেত্রেই আপনাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। যে কারণে লগ্নি না-করে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। তাঁদের অনুরোধ, দেশে ফিরে আসুন। লগ্নি করুন।’’ সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন, ‘‘মোটামুটি এক মাস পরেই ভোট। তার পরে সরকার বদলে যাবে। নতুন নীতি তৈরি করা হবে।’’ সরকার বদলের বিষয়ে একশো ভাগ নিশ্চিত বলেই যে নতুন শিল্পনীতির কথা বলা সম্ভব হচ্ছে, সেই বার্তা বুঝেশুনেই দিয়েছেন তিনি। বোঝাতে চেয়েছেন, নিশ্চিন্তে লগ্নি করুন। দেশ বদলাতে চলেছে।
আরও পড়ুন: মামলা গোপন রেখেছিল রাজ্য পুলিশ, অভিযোগ
তাঁর বাংলা যে প্রায় সব দিক থেকে নরেন্দ্র মোদীর ভারতকে পিছনে ফেলেছে, তার পরিসংখ্যানও পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দাবি করেছেন, রাজ্যের কৃষি ও শিল্পের বৃদ্ধি সর্বভারতীয় হারের তুলনায় যথাক্রমে ২৭৪% ও ১৯৪% বেশি। দেশে যখন বছরে দু’কোটি মানুষের কাজ গিয়েছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্ব কমেছে ৪০% হারে। দাবি করেছেন, এ রাজ্যের পরিকাঠামোয় বাড়বাড়ন্ত বাকি ভারতের গড়ের অন্তত চার গুণ। এখানে যে কাজের জায়গায় ধর্ম, জাতি ইত্যাদি বিশেষে পক্ষপাতিত্বের তিনি বিরোধী, মনে করিয়েছেন সে-কথাও। বলেছেন, তিনি ‘কথা কম কাজ বেশি’র নীতিতে বিশ্বাসী। যা শুনেও অনেকের প্রশ্ন, এর মাধ্যমে কি প্রচারে দড় মোদীকেই নিশানা করলেন তিনি?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা সম্বন্ধে কতটা জানেন?
মমতা বলেন, তিনি মানুষের জন্য, সারা দেশের জন্য কাজ করতে চান। প্রার্থনা করেন, ‘‘হে পিতা, আমার দেশকে জাগিয়ে তোলো।’’ মৃদু হেসে এক শিল্পকর্তার প্রশ্ন, ভোটের মুখে এই ডাক ব্যালট যুদ্ধের বিউগল নয় কি?