সামনে আয় দেখি, কত বড় বিজেপির বাচ্চা: মমতা

মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি আসতে দেখেই রাস্তার মোড়ে জড়ো হয়ে থাকা বিজেপি কর্মীরা গেরুয়া পতাকা দেখিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ তখন সেই জনতাকে ঠেলে সরিয়ে দেয়।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:৫৩
Share:

ক্রুদ্ধ: ভাটপাড়ায় তাঁর গাড়ি ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠার পরেই রাস্তায় নেমে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তেড়ে যান ভিড়ের দিকে। ধমক দিতে থাকেন পুলিশকর্তাদেরও। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

কোন রাস্তা দিয়ে তিনি ধর্ণা মঞ্চে যাবেন তা নিয়ে দুপুর থেকেই ধোঁয়াশা ছিল। অবশেষে একদা তাঁর দলের বিধায়ক এবং এখন ভোটে জিতে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বাড়ির সামনের রাস্তা ঘোষ পাড়া রোড দিয়েই বৃহস্পতিবার ছুটল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কনভয়।’ এমনকী পরপর দু'বার গাড়ি আটকে বিজেপি কর্মীদের স্লোগানের প্রতিবাদ করতে নিজেই রাস্তায় নামলেন মুখ্যমন্ত্রী। তেড়ে গিয়ে বললেন, ‘‘কোনও গুন্ডামি-মস্তানি বরদাস্ত করব না।’’

Advertisement

সাড়ে ৪টা নাগাদ তাঁর কনভয় ব্যারাকপুর পার করে জগদ্দলের দিকে ঢোকে। সেখানে মেঘনা মোড়ে অর্জুন সিংহের বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি আসতে দেখেই রাস্তার মোড়ে জড়ো হয়ে থাকা বিজেপি কর্মীরা গেরুয়া পতাকা দেখিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ তখন সেই জনতাকে ঠেলে সরিয়ে দেয়।

সেই সময় এলাকার জুটমিলগুলি ছুটি হওয়ায় গেটের বাইরে ভিড় করে ছিলেন শ্রমিকরা। সেই ভিড়ের মধ্যেই দলীয় পতাকা নিয়ে হাজির ছিলেন বিজেপি কর্মীরাও।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাদ গত বারের অর্থমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, আরও যে মন্ত্রীরা জায়গা পেলেন না এ বার

সেখানে‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিলেও সামনে আসতে পারেননি বিজেপি কর্মীরা। বাধা আসে ভাটপাড়ার রিলায়েন্স জুটমিলের সামনে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সেখানে তাঁর গাড়ির উপরে হামলা চালানোর চেষ্টা করেন জড়ো হয়ে থাকা একদল বিজেপি কর্মী। ওই জুটমিলের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। জটলার দিকে নিজে এগিয়ে গিয়ে বলেন, "বাঁদরামো! গাড়ির সামনে এসে হামলা! চামড়া গুটিয়ে দেব। কোনও গুন্ডামি মস্তানি হবে না। বেঁচে আছ আমাদের জন্য।"

এরপরেই তিনি সামনে থাকা ডিরেক্টর সিকিউরিটি বিনীত গোয়েলকে নির্দেশ দেন, যে ছেলেরা হামলার চেষ্টা করছিল তাঁদের নাম ও জায়গার নাম লিখে নিতে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়ে দেন, নাকা চেকিং হবে। বাড়ি বাড়ি চেকিং হবে। এরপরেই জটলা করে থাকা লোকজনের উদ্দেশে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এত বড় সাহস তুমি তোমার মত স্লোগান দাও। গাড়ির সামনে এসে হামলা করবে? আমাকে গালাগালি দিচ্ছিল। বাংলা কে গুজরাত বানাতে দেব না। বাংলা বাংলাই।"

এরপরে গাড়িতে উঠে খানিকটা এগতেই ভিড়ের মাঝখান থেকে ফের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠলে আবার নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী । সব অভব্যতার ব্যবস্থা পুলিশ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেবে বলে নৈহাটির দিকে এগিয়ে যায় কনভয়। বেশ কিছুটা যাওয়ার পরে ভাটপাড়া ও নৈহাটির সীমানায় নদীয়া জুটমিলের কিছুটা আগে ফের গোল বাধে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি দেখে বিজেপি কর্মীরা স্লোগান দিতে শুরু করলে তিনি রেগে যান। গাড়ি থেকে সটান ভিড়ের দিকে তেড়ে গিয়ে বলেন, "আয় সামনে এসে বল। এ দিকে আয়। বুকের ক্ষমতা দেখি কত বড়, বিজেপির বাচ্চা। গুন্ডা, ক্রিমিনাল সব।" মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে ও রাস্তার ধারে থাকা পুলিশ কর্মীরা ভিড় ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে ধর্না মঞ্চের দিকে রওনা করিয়ে দেন।

নৈহাটি স্টেশনের উল্টো দিকে, পুরসভার পাশে বাঁধা মঞ্চে যখন বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন নিচে দাঁড়িয়ে কিছুটা হলেও আশায় বুক বাঁধছিলেন টিনা গোডাউন এলাকার বাসিন্দা জারিনা খাতুন, কলিমুন্নেসারা। বললেন, "ভোটের দু'দিন পরই বিজেপি-র লোকেরা বাড়িতে এসে হামলা চালালো। সব জিনিসপত্র লুঠ করল। আমরা এতদিন ভয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছি। তবে আজ দিদি আসায় কিছুটা সাহস পাচ্ছি আবার বাড়ি ফেরার।" এ দিন ধর্না মঞ্চে ঢোকার আগে ঘোষ পাড়া রোডে কাঁকিনাড়া বাজার এলাকায় গাড়ি থামিয়ে সংখ্যালঘুদের সঙ্গেও কথা বলে তাঁদের অভিযোগ শোনেন মুখ্যমন্ত্রী । ‘দখল করা’ পার্টি অফিসও ‘মুক্ত’ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন