Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: শিল্পের পাশে থাকার বার্তা মমতার, স্বাগত জানাল শিল্পমহল, আমল দিচ্ছেন না বিরোধীরা

প্রায় ১,২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পানাগড় শিল্পতালুকে ৩৮ একর জমিতে পলি-ফিল্ম কারখানা তৈরি করছে একটি বেসরকারি সংস্থা।

Advertisement

সুব্রত সীট

পানাগড় শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৫৭
Share:

পানাগড় শিল্পতালুকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিকাশ মশান

আগেই বলেছিলেন, পরের গন্তব্য (‌‌ডেস্টিনেশন) শিল্প। ইতিমধ্যে শিল্প-সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা মেটাতে যে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশনাল বোর্ড’ তৈরি হয়েছে তাঁর ‘চেয়ারপার্সন’ তিনি। তৃণমূল তৃতীয় দফায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে, শিল্পায়নের প্রতি সে আগ্রহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দু’টি নতুন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার পানাগড় শিল্পতালুকে একটি বেসরকারি কারখানার শিলান্যাস এবং কিছু সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাঙা চাল থেকে জৈব জ্বালানি ইথানলের ‘প্রোমোশন’ নীতি এবং ‘ডেটা হ্যান্ডলিং অ্যান্ড স্টোরেজ হাব’ গড়ার কথা জানান তিনি। আশ্বাস দেন, ‘‘আমাদের সরকার শিল্পের পাশে থাকবে।’’ আশা প্রকাশ করেন, বাংলা শিল্পেও দেশে ‘এক নম্বর হবে’। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় আশাবাদী শিল্প মহল। তবে আমল দিতে চাননি বিরোধীরা।

Advertisement

প্রায় ১,২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পানাগড় শিল্পতালুকে ৩৮ একর জমিতে পলি-ফিল্ম কারখানা তৈরি করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। ২০২৩-এর মধ্যে সেখানে উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। তার শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সামাজিক সুরক্ষার নানা প্রকল্পে রাজ্য প্রথম। আমার পরের ডেস্টিনেশন (গন্তব্য), শিল্প। কথা দিচ্ছি, বাংলা শিল্পেও এক নম্বর হবে।’’

চাল থেকে ইথানল গড়ার কাজ শুরু হলে, সে শিল্প-ক্ষেত্রে এক বছরে ১,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ, ৪৮ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে ‘খুদ-কুঁড়ো’ বেচে প্রান্তিক চাষিদের উপার্জন বাড়বে বলে তাঁর আশা। জানান, পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় চারশো ‘মেগাওয়াটের’ ‘ডেটা হ্যান্ডলিং এবং স্টোরেজ হাব’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এই ‘ডেটা সেন্টার’ পূর্ব ভারতের পাশাপাশি, বাংলাদেশ, নেপাল-ভুটানেরও চাহিদা মেটাবে। তাতে ২০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি ও প্রায় ২৪ হাজার চাকরি হতে পারে।

Advertisement

লগ্নি, কর্মসংস্থান, পরিকাঠামো নির্মাণ ও শিল্প নীতি— মমতার বক্তব্যে ঘুরেফিরে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, দশ বছরে এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে রাজ্যে। বীরভূমের ডেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি ক্ষেত্রে ১৫ হাজার কোটি, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীতে’ ৭২ হাজার কোটি, দুর্গাপুর, জামুড়িয়া, হাওড়া ও জামালপুরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার লগ্নি হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ‘লক্ষ লক্ষ’ এবং ১০ হাজার কাজের সুযোগ তৈরি হবে। ডেউচা-পাঁচামির খনি চালু হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাজ্যে ঘাটতি থাকবে না এবং বিদ্যুতের দাম কমবে বলে আশাবাদী মমতা।

শিল্পোদ্যোগীদের মতে, শিল্পায়নের জন্য জরুরি, শিল্প নীতি প্রণয়ন এবং পরিকল্পনা। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশনাল বোর্ড’-এর ভূমিকা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘শিল্পপতিদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। একটা ওয়ান উইন্ডো (এক জানলা) ফর্মুলা। কাজ যাতে পড়ে না থাকে। ঠিক করেছি, প্রতি মাসে একটা করে বৈঠক হবেই। কী জমা পড়ল, কেন পড়ে থাকল এবং কতটা সাহায্য করা সম্ভব, দেখা হবে।’’

অতিমারির সময়েও ‘উৎকর্ষ বাংলায়’ প্রায় ছ’লক্ষ যুবক-যুবতীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখান থেকে প্রায় ২৫ হাজার জন কাজ পেয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘অতিমারির সময়েও ৪০% কর্মসংস্থান বেড়েছে রাজ্যে।’’ পোলট্রি-শিল্প গড়ায় উৎসাহ দেন তিনি। শিল্প টানতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ বিশ্ব বাংলা সম্মেলনের জন্যও তৈরি হতে বলেন ডব্লিউবিআইডিসির চেয়ারম্যান রাজীব সিংহকে।

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঠিক কত টাকা লগ্নি হয়েছে, তা আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি। শুধু ‘মউ’ সই হয়েছে জানি। আমরাও চাই, রাজ্যে লগ্নি হোক। কিন্তু রাজ্যে আগেও শিল্প সম্মেলন হয়েছে। তাতে লাভ হয়নি।’’ সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের অধীন কারখানাগুলি হয় ধুঁকছে, না হয় বন্ধ। সেখানে এ সব শিল্প-কথা ফাঁকা বুলি।’’ তৃণমূলের জেলা সম্পাদক বিধান উপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শিল্পায়নের নতুন দিশা দেখিয়েছেন। বিরোধীরা চোখ বুজে আছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন