বিরোধীদের কম দেখাই ভাল, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর

সাড়ে ছ’বছরের তৃণমূল জমানায় এর আগেও বহু বার মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিরোধীদের চাঁছছোলা আক্রমণ করেছেন। কিন্তু এ দিন বিরোধীদের প্রতি তাঁর সুর ছিল একেবারে দুরমুশের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০২
Share:

বিরোধীদের সঙ্গে যত কম দেখা হয়, ততই ভাল। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শুক্রবার এমনই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই নোয়াপাড়া বিধানসভা এবং উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তার পর দিনই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ওই উক্তিতে তাদের প্রতি তাঁর ‘অবজ্ঞা’র মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা।

Advertisement

বস্তুত, সাড়ে ছ’বছরের তৃণমূল জমানায় এর আগেও বহু বার মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিরোধীদের চাঁছছোলা আক্রমণ করেছেন। কিন্তু এ দিন বিরোধীদের প্রতি তাঁর সুর ছিল একেবারে দুরমুশের। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৫ আসন নিয়ে জয়ের পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিরোধীদের উদ্দেশে এক বার বলেছিলেন, ‘‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০। ওদের কথা কেন শুনব?’’ আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘ওদের সঙ্গে যত কম দেখা হয়, ততই মঙ্গল। আপনারা (তখন সভায় শুধুই শাসক) ভাল থাকবেন। তা হলেই ভাল!’’ তাঁর আরও বক্তব্য ছিল, ‘‘কালই সবে গোহারা হেরেছে। আজই এসে মুখে প্লাস্টার লাগাতে পারল না!’’ আর কংগ্রেসের প্রতি মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘দিল্লির নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন। তৃণমূল ছাড়া কংগ্রেস চলে না। আপনাদের নেতা সনিয়া গাঁধী। আপনারা তো চুনোপুঁটি নেতা! নোংরা খেলা খেলছেন!’’

বিধানসভায় এ দিন শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের সরাসরি সম্প্রচারে অনুমতি দিয়েছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেই আপত্তি করে বিধানসভায় গণতন্ত্রের অমর্যাদা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। একই বক্তব্য ছিল বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও। কিন্তু স্পিকার তাতে আমল না দেওয়ায় হইচই করতে থাকেন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণেই ক্যামেরা চলবে? তার মাঝখানেই শোনা যায়, মুখ্যমন্ত্রী চেঁচিয়ে বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, হবে! স্পিকার, আপনি হাউজ চালান।’’ ওই সময়েই বিরোধীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আপনারা ওয়াক আউট করুন।’’ এর পর প্রথমে কংগ্রেস, পরে বামেরা সভা থেকে ওয়াক আউট করে। মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীহীন সভায় তাঁর ভাষণে দাবি করেন, তিনি চাইলেই যখন-তখন টিভিতে খবর করাতে পারেন। কিন্তু বাম-কংগ্রেস মানুষের মন থেকে মুছে যাওয়ার পর এখন শুধু টিভিতে মুখ দেখিয়ে বেঁচে আছে! স্পিকার জানান, কার বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচারে অনুমতি দেওয়া হবে, তা ঠিক করার অধিকারী শুধু তিনি।

Advertisement

পরে সভার বাইরে মান্নান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হিংসুটে! ওঁর অনুপ্রেরণায় সুবোধ বালকের মতো বসে আছি— এই কথা বলার জন্য আমরা বিধানসভায় যাই না।’’ আর সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মানসিকতা হল— সব আমি। আমি কী বলছি, গ্রামে-গঞ্জে মানুষ সেটা শুনলেই হল। বিধায়করা কে কী বলছেন, সেটা কারও জানার দরকার নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন