মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘটানো জোড়া বিস্ফোরণ নিয়ে পর পর দু’দিন সংসদ পর্যন্ত আন্দোলিত হয়ে উঠল। কিন্তু এটাও বাস্তব যে, মমতার অভিযোগের ভিতটাই নড়বড়ে লাগছে অনেকের কাছে। দু’টি ঘটনা নিয়েই পাল্টা যুক্তি দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
ফলে জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতিতে এখন একটিই প্রশ্ন— এ বার কি কিছুটা কাঁচা কাজ করে ফেললেন তৃণমূল নেত্রী? নাকি নেপথ্যে বৃহৎ কোনও কৌশল রয়েছে তাঁর?
বুধবার মমতার প্রথম তোপ ছিল, পটনা থেকে ফেরার পথে জ্বালানি কম থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিমানকে নামার অনুমতি না দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল। পরের দিন রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে ১৯টি জায়গায় সেনা মোতায়েনের অভিযোগও মোটেই হাল্কা ছিল না। মমতার বক্তব্য, কে বলতে পারে সেনাকে দিয়ে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে কব্জা করার চক্রান্ত হয়নি! দু’টি অভিযোগই খণ্ডন করেছে কেন্দ্র। সংসদে তৃণমূল ও তার বন্ধু দলগুলির অভিযোগের উত্তরে বৃহস্পতিবার বিমানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিমানে জ্বালানি কম থাকা নিয়ে বিচলিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। আর শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘‘রুটিন সেনা মহড়া চলছিল। এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।’’
এখন প্রশ্ন হল, কেন এই পথে হাঁটছেন মমতা? রাজনীতির কারবারিরা অনেকেই বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে মমতার অভিযোগ সারবত্তাহীন বলে মনে হলেও তার পিছনে সুনির্দিষ্ট রাজনীতি রয়েছে। তাঁদের মতে, ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে মমতার এখন মূল লক্ষ্যই হল সর্বভারতীয় স্তরে মোদী বিরোধী রাজনীতির অন্যতম মুখ হয়ে ওঠা। তিনি আঁচ করছেন, মোদীর রেখাচিত্র নিম্নগামী।
কেন্দ্রে পালাবদলের সম্ভাবনা ক্রমশই জোরদার হচ্ছে। তাই কৌশলে তাঁর মোদী-বিরোধিতাকে মমতা এতটাই উঁচু তারে রাখতে চাইছেন যাতে অদূর ভবিষ্যতে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির কোনও জোট তৈরি হলে তার অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন তিনি। এবং জোড়া অভিযোগে জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় তোলার অঙ্কে যে তিনি ষোলো আনা সফল, সেটা সংসদের ছবি থেকেই স্পষ্ট।
তৃণমূলেরই এক নেতা এ দিন বলেন, আসলে আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে উঠে এসে জাতীয় রাজনীতির মুখ হওয়া সহজ নয়।
সেই লক্ষ্যে মনমোহন-সনিয়াকে ধারাবাহিক ভাবে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছিলেন মোদী। মমতার রাজনৈতিক কৌশলও তার থেকে আলাদা নয়।
কিন্তু মমতার সেই কৌশলে কংগ্রেস সায় দিচ্ছে কেন? জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী পরিসর কেন তারা ছেড়ে দিচ্ছে তৃণমূল নেত্রীকে? কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, আপাতত তাঁদের লক্ষ্য সংসদে মোদীকে কোণঠাসা করা। সেখানে মমতাকে পাশে পেলে লাভ বই ক্ষতি নেই। কিন্তু সংসদের বাইরে কৌশল হবে সম্পূর্ণ আলাদা।
কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতা আবার এ দিন বলেন, দিদির কাছে পরিষ্কার যে ২০১৯ এর ভোটের আগে বিজেপি বাংলায় শক্তি বাড়ানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। সে জন্য সারদা-নারদ তদন্ত নতুন করে গতি পেতে পারে।
মমতা তাই আগেভাগেই চক্রান্তের অভিযোগ তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। যাতে নতুন করে সিবিআই-ইডি সক্রিয় হলে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলতে সুবিধা হয়।