আমলা পাঠিয়ে দিল্লি সড়ক খোলা মমতার

শুধু সিনিয়র আমলাদের দিল্লি পাঠানোই নয়, প্রশিক্ষণ পর্বের শেষ তিন মাস বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে কাটিয়ে আসা নবীন আইএএস অফিসারদেরও এ বার মহকুমাশাসকের পদে পাঠাতে রাজি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:২৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী-পদে নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় বারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচন পর্বে মোদী-মমতার দ্বৈরথ নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে চর্চা এখনও অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির দরজা অবশ্য পুরোপুরি বন্ধ করছে না নবান্ন। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যের তিন সিনিয়র আইএএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিকে সম্প্রতি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট অফিসারদের ছাড়তে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই। ওঁরাই আপাতত দিল্লির সঙ্গে কলকাতার ‘যোগসূত্র’ হিসেবে কাজ করতে পারেন বলে আশা নবান্নের।

Advertisement

শুধু সিনিয়র আমলাদের দিল্লি পাঠানোই নয়, প্রশিক্ষণ পর্বের শেষ তিন মাস বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে কাটিয়ে আসা নবীন আইএএস অফিসারদেরও এ বার মহকুমাশাসকের পদে পাঠাতে রাজি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদী প্রশাসনের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন বলে গত প্রায় এক বছর ধরে তাঁদের কোনও ‘ফিল্ড পোস্টিং’-এ পাঠানো হয়নি।

নবান্নের খবর, বুধবার রাজ্যের সচিব পর্যায়ের তিন অফিসার রাজেন্দ্র শুক্ল, ইন্দিবর পাণ্ডে ও চন্দন সিনহাকে দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক মহলের দাবি, ওই তিন জন ছাড়াও আরও অন্তত হাফডজন অফিসার দিল্লি যেতে চেয়ে সরকারের কাছে অনেক দিন ধরেই তদ্বির করছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আপাতত তিন জনকেই ছাড়তে রাজি হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত এক আইএএস দিল্লি যেতে চাইলেও মুখ্যমন্ত্রী এ বার তাঁকে ছাড়েননি। এ বার যে-তিন জন অফিসারকে তিনি দিল্লিতে পাঠাচ্ছেন, তাঁরা এনডিএ আমলে কেন্দ্রীয় সরকারে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের পুরনো অভিজ্ঞতা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক সহজ করতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

আমলাদের একাংশ চাইছেন, নির্বাচনী প্রচার পর্বে তিক্ততা ভুলে ফের দিল্লির সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে আসুক নবান্ন। এ ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক যোগসূত্রগুলি’ যদি এখনই কাজ না-করে, প্রশাসনিক মাধ্যমেই তা স্বাভাবিক করা সম্ভব বলে তাঁদের মত। ওই আমলাদের মতে, আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা, পিএম কিসান-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এখনই যোগ দেওয়া উচিত রাজ্যের। তা হলে অন্তত বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। সেই সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আবার নতুন পথে এগোতে পারবে।

আমলাদের একাংশ চান, দিল্লিতে আরও বেশি আইএএস অফিসার পাঠানো হোক। যাতে কেন্দ্রীয় সচিব স্তরে রাজ্যের অফিসারেরা প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। এখন প্রতিরক্ষাসচিব সঞ্জয় মিত্র, প্রধানমন্ত্রীর সচিব ভাস্কর খুলবে ছাড়া বেঙ্গল ক্যাডারের তেমন উল্লেখযোগ্য আর কোনও অফিসার দিল্লিতে নেই। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রে এক সময় বেঙ্গল ক্যাডারের ৪২ জন আইএএস অফিসার কর্মরত ছিলেন। তাঁরা ২০১১ সালের পরে একে একে ফিরে আসেন। তার পরে মমতার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক এমন অবস্থায় পৌঁছয় যে, তার জেরে রাজ্য থেকে কেন্দ্রে অফিসার পাঠানোই বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে সেই পরিস্থিতি বদলের ইঙ্গিতে খুশি আমলাদের একাংশ।

সিনিয়র আমলাদের সঙ্গে জুনিয়র আমলাদেরও মহকুমাশাসক পদে পাঠানোর সিদ্ধান্তে খুশি অফিসারদের অনেকেই। তবে যে-ভাবে পরপর শেষ দুই ব্যাচের আইএএস অফিসারদের প্রায় এক বছর বসিয়ে রাখা হয়েছিল, তেমনটা যাতে আর না-হয়, সেই চর্চাও চলছে প্রশাসনের অন্দরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement