ধুলিয়ানে নিহত হরগোবিন্দ দাসের স্ত্রী পারুল দাসকে (গায়ে হলুদ চাদর) পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক শুভেন্দু অধিকারীর। — নিজস্ব চিত্র।
ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনের সময় মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে খুন হয়ে যান হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর পুত্র চন্দন। মঙ্গলবার সেই খুনের ঘটনায় ১৩ জন দোষীকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনাল জঙ্গিপুর আদালত। তবে আদালতের রায়ে খুশি নয় হরগোবিন্দ-চন্দনের পরিবার। ফাঁসির দাবিতে অনড় তারা। পরবর্তীকালে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ভাবনা রয়েছে পরিবারের। তাদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদ। হিংসা ছড়িয়েছিল জঙ্গিপুরের শমসেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ানের মতো অঞ্চলে। গত ১২ এপ্রিল, এই অশান্তিতে প্রাণ হারান শমসেরগঞ্জের হরগোবিন্দ এবং চন্দন। অভিযোগ, তাঁদের খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় রাজনৈতিক শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে। তবে পুলিশ প্রথম থেকে জানিয়ে এসেছে, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এই খুন হয়েছে। রাজনৈতিক বা অন্য কোনও কারণ নেই।
এই ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত শুরু করে রাজ্য পুলিশ। গত ৬ জুন ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট আদালতে জমা দেয় পুলিশ। ১৬ ডিসেম্বর এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়। সোমবার ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তাঁদের প্রত্যেককেই যাবজ্জীবন সাজা শোনান তিনি।
তবে এই সাজায় খুশি নয় হরগোবিন্দের পরিবার। মঙ্গলবার জঙ্গিপুর আদালত যখন রায় শোনাচ্ছে, তখন হরগোবিন্দের স্ত্রী পারুলকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্দু। সেই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই রায়ে খুশি নই। এদের সকলের ফাঁসি চেয়েছিল গোটা ভারতবর্ষ। পারুল দাসের অনুমতি নিয়ে বলছি, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন। আমরা হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যে আইনজীবীদের দরকার, আমরা তাঁদের দিয়ে আইনি সহায়তা দেব। আজকের রায়কে স্বাগত জানাতে পারছি না।’’
ফাঁসির সাজা না-হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, কামদুনির মতো পুলিশই এই মামলাটিকে নষ্ট করেছে। এটা পুলিশের চক্রান্ত। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিচারের জন্য দায়ী। কেন ফাঁসি হল না?’’ শুভেন্দুর কথায়, ‘‘তিন জনকে চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। এই তিন জনের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আগে থেকেই সমস্যা চলছিল। এই তিন জনকে সাহায্য করেছিল বাকিরা। তবে পুলিশ এদের সকলকে এক সারিতে রেখেছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘পরিবারের ফাঁসির সাজার দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। উচ্চ আদালতে পারুল মায়ের আইনি লড়াইয়ে আমরা সহযোগী হব। আমরা দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেখতে চাই।’’ হরগোবিন্দের স্ত্রী বলেন, ‘‘ওদের (দোষীদের) ফাঁসি চাই।’’
মঙ্গলবার রায়ের পর এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মামলায় মোট ৩৮ জন সাক্ষী ছিল, তার মধ্যে ৫ জন প্রত্যক্ষদর্শী। মৃতদের মধ্যে একজনের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি ছিল। সবমিলিয়ে আমরা এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরল’ হিসাবে এই মামলায় ফাঁসির সাজা চেয়েছিলাম। তবে বিচারক অপরাধীদের পরিবারের অবস্থার চিন্তা করে হয়তো মৃত্যুর সাজা ঘোষণা করেননি।’’