Murshidabad Father-Son Murder Case

শমসেরগঞ্জে পিতা-পুত্র খুনে দোষী ১৩ জনেরই যাবজ্জীবন সাজা! পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্যকে নির্দেশ

গত ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের বাসিন্দা হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর পুত্র চন্দন দাসকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার সেই খুনের ঘটনায় শাস্তি ঘোষণা করল জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত। পুলিশ জানায় কী ভাবে তদন্ত করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:২৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভের সময় খুন হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের পিতা-পুত্র হরগোবিন্দ এবং চন্দন দাস। খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১৩ জনের সাজা ঘোষণা করল জঙ্গিপুর আদালত। প্রত্যেককেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ভবানী ভবন থেকে সাংবাদিক করে রাজ্য পুলিশ শমসেরগঞ্জের ঘটনার তদন্ত নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়।

Advertisement

সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদ। হিংসা ছড়িয়েছিল জঙ্গিপুরের শমসেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ানের মতো অঞ্চলে। গত ১২ এপ্রিল, শনিবার এই অশান্তিতে প্রাণ হারান শমসেরগঞ্জের হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর পুত্র চন্দন দাস। অভিযোগ, তাঁদের খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় রাজনৈতিক শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে। তবে পুলিশ প্রথম থেকে জানিয়ে এসেছে, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এই খুন হয়েছে। রাজনৈতিক বা অন্য কোনও কারণ নেই। চার্জশিটেও তা উল্লেখ করেছিল পুলিশ।

হরগোবিন্দ এবং চন্দন দাস খুনে অভিযুক্ত ১৩ জনের ১৩ জনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের চার্জশিট দেওয়ার পর শুরু হয় বিচারপ্রক্রিয়া। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, ঘটনার ৫৫ দিনের মাথায় জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়। তার প্রেক্ষিতে তাঁরা দ্রুত শুনানির আবেদন করেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছিল, ঘটনার দিন ঘরের ভিতর থেকে বাবা-ছেলেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এই ঘটনায় ডিআইজি পদমর্যদার আধিকারিকের নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়।

Advertisement

মামলার শুনানি শেষ হয় গত সপ্তাহে। সোমবার বাবা-ছেলের খুনের ঘটনায় মোট ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে জঙ্গিপুর আদালত। রায় ঘোষণার সময় বিচারক জানান, রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত রোষে ওই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছিল।

সোমবার দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। মঙ্গলবার সাজা ঘোষণার দিন সকাল থেকে থমথমে শমসেরগঞ্জ। এলাকায় অশান্তির আশঙ্কায় রুটমার্চ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে ছিল পুলিশও। এলাকায় যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে দিকে কড়া নজর ছিল পুলিশের। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে সাজা ঘোষণা করে জঙ্গিপুর আদালত। সাজা শুনে আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন দোষীরা। তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি।

সাজা ঘোষণার আগে ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের হয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার শমসেরগঞ্জের ঘটনার তদন্ত নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন। তিনি জানান, কী ভাবে পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু রাজ্য থেকে নয়, রাজ্যের বাইরে অর্থাৎ ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডেও এই খুনের ঘটনার তদন্তে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল। আমরা ৫৬ দিনের মধ্যে এই মামলায় চার্জশিট দিয়েছিলাম।’’ সুপ্রতিম আরও জানান, তদন্তের সময় ঘটনাস্থল বা অন্য জায়গার বিভিন্ন সময়ে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। প্রত্যেক অভিযুক্তের গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়েছিল। প্রত্যেকের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন খতিয়ে দেখা হয়েছিল। সেই তথ্যও আদালতে জানানো হয়। পরে অভিযুক্তদের ‘জিএআইটি’ পরীক্ষা করা হয়েছিল। অর্থাৎ, তাঁদের হাঁটাচলা পরীক্ষা করা হয়। সেই তথ্যের সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হয়। দু’টি হুবহু মিলে যায়।

সুপ্রতিম আরও জানান, খুনের যে অস্ত্র উদ্ধার হয়, তাতে রক্তের দাগ মেলে। হরগোবিন্দ এবং চন্দনের ডিএনএ-র সঙ্গে মিলে যায় ওই রক্তের ডিএনএ-ও। গণপিটুনিতে হত্যার ধারা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, ওই সময়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের যা যা ঘটনা ঘটেছে, তা-ও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, গণপিটুনি ছাড়াও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১০-এর ২ ধারায় ডাকাতি, ৩৩১-এর ৫ ধারায় অন্যের বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ, ১৯১-এর ৩ ধারায় মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে সহিংস ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা, ১১৫-র ২ ধারায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত, ১২৬-এর ২ ধারায় জোর করে আটকে রাখা, ৩৩২-এর এ ধারায় খুনের জন্য অন্যের বাড়িতে প্রবেশের অভিযোগ রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement