বিধানসভায় শূন্য পাবে বিজেপি, চ্যালেঞ্জ মমতার

নির্বাচনে হার-জিত থাকে এবং বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেই তাঁদের এগোতে হবে— এই বার্তাই বৃহস্পতিবার নৈহাটি পুরসভার সামনে ঘরছাড়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জন্য অবস্থান-মঞ্চ থেকে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাপস রায়, নির্মল ঘোষ, সুজিত বসু, মদন মিত্রেরা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

নৈহাটি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:৪৮
Share:

নৈহাটি পুরসভার সামনে অবস্থান-মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ছবি পিটিআই।

দলের গত ১০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচনী বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন তিনি। কঠিন পরিস্থিতিতে পাল্টা আগ্রাসনকেই কৌশল হিসেবে বেছে নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের সাত দিনের মাথায় বিজেপি-মোকাবিলায় রাস্তায় নেমে পড়লেন তৃণমূল নেত্রী। শুধু তা-ই নয়, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী যখন দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন, সেই সময়েই নৈহাটিতে তৃণমূলের অবস্থান-মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতার ঘোষণা, ‘‘দীনেশ ত্রিবেদী হারেননি। আসনটা (ব্যারাকপুর) ওরা ভোট লুঠ করে দখল করেছে। আমরা পুনরুদ্ধার করব। আগামী বিধানসভায় বিজেপি একটা আসনও পাবে না, আমি চ্যালেঞ্জ করলাম! যদি আমি বেঁচে থাকি!’’ টাকা ছড়িয়ে, সিপিএম এবং তৃণমূলের একাংশকে কিনে নিয়ে, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় বিজেপি বাংলায় বেশ কিছু আসন জিতেছে— এই তত্ত্বেই অনড় থেকেছেন তিনি।

নির্বাচনে হার-জিত থাকে এবং বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেই তাঁদের এগোতে হবে— এই বার্তাই বৃহস্পতিবার নৈহাটি পুরসভার সামনে ঘরছাড়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জন্য অবস্থান-মঞ্চ থেকে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাপস রায়, নির্মল ঘোষ, সুজিত বসু, মদন মিত্রেরা। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এসেই দলের সুর সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছেন। সুর চড়ানোর লক্ষ্যেই তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘পরিবর্তনের পরে ২০১১ সালে বলেছিলাম, বদলা নয়, বদল চাই। রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাতে বলেছিলাম। আমি মানবিক, তাই একটু বেশি করেছিলাম! এখন বলছি, বদলা নেব!’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘সন্ত্রাসের বদলা নেব শান্তি ফিরিয়ে এনে, অত্যাচার বন্ধ করে।’’

Advertisement

দলের এই অবস্থান-মঞ্চে আসার পথে ভাটপাড়া ও নৈহাটিতে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনে এ দিনও ফের মেজাজ হারিয়েছিলেন মমতা। পরে দলের মঞ্চে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপির টাকা নিয়ে কিছু লোক আমার গাড়ির সামনে হামলা করতে এসেছিল। আমার খাবে, আমার পরবে, আবার এ সব করবে!’’ তাঁর সাফ কথা, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানধারীদের ঘটনাস্থলেই গ্রেফতার করানো যেত। কিন্তু তিনি তা করেননি।

আপাতত বাংলায় ১৮টি লোকসভা আসন জিতলেও মোদী-অমিত শাহের বিজেপিকে ভরাডুবিও দেখে যেতে হবে বলে দাবি করে মমতা এ দিন আরএসএসের মোকাবিলা করার জন্য তাঁর দলকে দুই বাহিনী গড়ে তোলার দাওয়াই দিয়েছেন।

ব্লকে ব্লকে ছেলেদের জন্য তৈরি করতে বলেছেন, ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ আর মেয়েরা গড়বেন ‘বঙ্গ জননী বাহিনী’। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ এবং ‘গঙ্গা-যমুনা পাড়ে’র শাড়িতে ‘বঙ্গ জননী বাহিনী’ এলাকা পাহারা দেবে। রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির মোকাবিলায় ‘জয় হিন্দ’ বলার জন্যও সকলকে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘জয় হিন্দ বাংলা, হিন্দি সব ভাষাতেই চলে। নেতাজি সুভাষচন্দ্রের কথা। দেখা হলেই বা ফোনে কথা হলে একে অপরকে বলুন ‘জয় হিন্দ’। বিজেপির স্লোগান আমরা মানব কেন?

অর্জুন সিংহের কাছে হারের পরে ব্যারাকপুর পুনরুদ্ধারের বড় দায়িত্বও নিজের কাঁধে নিতে চেয়েছেন মমতা। বুথ স্তরের কর্মীদের কথা শুনতে আগামী ১৪ জুন কাঁচরাপাড়ায় সভা করতে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি, যেখানে সাধারণ মানুষও থাকতে পারেন। মমতার কথায়, ‘‘এখন মাঝেমধ্যেই আমি ব্যারাকপুরে ঢুঁ মারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন