ওয়াকফ দুর্নীতির তদন্ত ভার নিল না সিবিআই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চেয়েছিল, বাম আমলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্ত করুক সিবিআই। সেই আর্জি জানিয়ে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে গত তিন বছরে দফায় দফায় নথিপত্র পাঠিয়েছে নবান্ন। কিন্তু রাজ্যের পাঠানো সমস্ত নথি পরীক্ষা করে সিবিআই সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তারা এই তদন্ত-ভার নিতে পারছে না। দুর্নীতি-তদন্তের প্রশ্নে কোনও রাজ্যের পাঠানো অনুরোধ সিবিআই খারিজ করে দিয়েছে, এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না বলেই জানাচ্ছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৩
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চেয়েছিল, বাম আমলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্ত করুক সিবিআই। সেই আর্জি জানিয়ে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে গত তিন বছরে দফায় দফায় নথিপত্র পাঠিয়েছে নবান্ন। কিন্তু রাজ্যের পাঠানো সমস্ত নথি পরীক্ষা করে সিবিআই সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তারা এই তদন্ত-ভার নিতে পারছে না। দুর্নীতি-তদন্তের প্রশ্নে কোনও রাজ্যের পাঠানো অনুরোধ সিবিআই খারিজ করে দিয়েছে, এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না বলেই জানাচ্ছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। কেন সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নিল না?

Advertisement

ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার ডিআইজি তথা কলকাতা অফিসের দুর্নীতি দমন শাখার প্রধান নবীনকুমার সিংহ রাজ্য সরকারকে যে চিঠি লিখেছেন, তাতে বলা হয়েছে ওয়াকফ আইনে যে হেতু ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও মুতোয়ালিদের দায়দায়িত্বের কথা বলা আছে এবং সেগুলির চরিত্র মূলত দেওয়ানি বিধির আওতাধীন, তাই নবান্নের আর্জি মানা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ওই চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য সরকার ওয়াকফ বোর্ডের তথাকথিত দুর্নীতি সংক্রান্ত যে সব নথিপত্র পেশ করেছিল, তা-ও ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সিবিআই।

অথচ, সিবিআই ও নবান্নের মধ্যে গত তিন বছর ধরে এ নিয়ে কম টানাহ্যাঁচড়া হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, ক্ষমতায় আসার পরে ওয়াকফ বোর্ডের কাজকর্ম নিয়ে অর্থ দফতর যে বিশেষ অডিট করেছিল, তাতেই প্রথম আর্থিক দুর্নীতির ইঙ্গিত মেলে। তখনই ওই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সেই অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারি করে বোর্ড সংক্রান্ত সমস্ত নথি ও গোটা অডিট রিপোর্টটাই তুলে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। ২০১৩-র গোড়ার দিকে সিবিআই নবান্নকে জানায়, অডিট রিপোর্টটি পড়ে মামলা করার মতো সাক্ষ্যপ্রমাণ তারা পাচ্ছে না। তাই আরও নিখুঁত ও সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে সিবিআই একগুচ্ছ প্রশ্ন পাঠায় সরকারকে।

Advertisement

বছরখানেক আগে সেই প্রশ্নাবলির উত্তর পাঠায় রাজ্য সরকার। কিন্তু তা-ও সন্তুষ্ট করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। রাজ্যের পাঠানো তথ্য খতিয়ে দেখে সিবিআই অবশেষে জানিয়ে দিল, নবান্নের সুপারিশ মেনে ওয়াকফ বোর্ড সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত তারা করতে পারবে না।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সিআইডি-কে দিয়েই তদন্ত করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। নবান্নের খবর, রাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৪৮টি ওয়াকফ এস্টেটের মধ্যে ১৬টির কাজকর্ম খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সিবিআইকে। বাকিগুলি রয়েছে সিআইডি-র হাতেই। তার মধ্যে ক্যামাক স্ট্রিটের একটি ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ এনে তৎকালীন ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান সিমিএমের প্রাক্তন সাংসদ হান্নান মোল্লা ও এক অবসরপ্রাপ্ত আমলার বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারে সিআইডি।

হান্নান সাহেব বলেছেন, “সরকার তদন্ত করতেই পারে। যে কোনও তদন্তকে স্বাগত!” তাঁর আরও প্রতিক্রিয়া, এটাই বর্তমান সরকারের দ্বিচারিতা। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে নিজের নেতা-মন্ত্রীদের বাঁচাতে আমজনতার করের টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করছে তারা, আবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সেই সিবিআইকেই ডেকে আনতে চাইছে। হান্নান সাহেবের মতে, “বিরোধীদের গলা টিপে ধরতেই সূর্যকান্ত মিশ্রের স্ত্রীর সংস্থায় পুলিশ পাঠিয়েছে সরকার। এখন ওয়াকফ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে এফআইআরের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন