প্রেম-প্রতিশোধের জতুগৃহে তিন জনের মৃত্যু, জখম ২৫

পুলিশি সূত্রের খবর, রবিউল আদতে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর এলাকার বাসিন্দা। বছর দুয়েক আগে স্ত্রীকে নিয়ে আক্রার বোগা-নোয়াপাড়ায় ওই বস্তিতে ঘর ভাড়া নেয় সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০১:০৬
Share:

শোকার্ত: মৃত সুলতান আহমেদের স্ত্রী শবনম বিবি। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

প্রেম বললে পত্নীপ্রেম। প্রতিশোধ বললে পত্নীর বিশ্বাসভঙ্গের প্রতিশোধ। সেই প্রেম-প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন তিন জন। চারটি শিশু, মহিলা-সহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলা থানার আক্রা এলাকায় বুধবার রাতের এই ঘটনায় রবিউল মিস্ত্রি নামে এক রাজমিস্ত্রিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশি সূত্রের খবর, রবিউল আদতে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর এলাকার বাসিন্দা। বছর দুয়েক আগে স্ত্রীকে নিয়ে আক্রার বোগা-নোয়াপাড়ায় ওই বস্তিতে ঘর ভাড়া নেয় সে। বস্তি মানে পাশাপাশি ঝুপড়ি ঠিক নয়। বিশাল একটি বাড়ির খুপরি খুপরি ঘরে থাকে অগুনতি পরিবার। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবাস। রবিউলের ঘরের কয়েক ঘর পরেই থাকেন মহম্মদ রহমত। সেই রহমতের শ্যালক ফিরোজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রবিউলের স্ত্রীর। মাসখানেক আগে ফিরোজের সঙ্গে চলে যান সেই মহিলা। তা সত্ত্বেও স্ত্রীকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল রবিউল। এমনকি স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য পড়শিদের বারবার অনুরোধও করে সে। তার অভিযোগ, পড়শিরা তার আবেদনে কান দেননি। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার আগ্রহের পিছনে কতটা প্রেম ছিল আর কতটা প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা, বলার কেউ নেই। তবে প্রতিবেশীরা যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে এনে দিলেন না, সেটা রবিউলের কাটা ঘায়ে নুন ছিটিয়ে দিয়েছিল। রবিউলের ক্রোধ এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, কেরোসিন আর বিদ্যুতের তারে পুরো বাড়িটাকে আস্ত জতুগৃহ বানিয়ে সে রহমতের পরিবার-সহ বস্তির সব বাসিন্দাকে খুনের ছক কষেছিল বলে জানান তদন্তকারীরা।

কেমন সেই ছক?

Advertisement

পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে রবিউলদের বাড়ির উল্টো দিকের একটি বিয়েবাড়িতে বস্তির সকলের নিমন্ত্রণ ছিল। রাত আড়াইটে পর্যন্ত বস্তির সকলে সেই অনুষ্ঠানবাড়িতেই ছিলেন। বস্তি ছিল প্রায় ফাঁকা। আর সেই সুযোগটাকেই ফাঁদ পাতার কাজে লাগায় রবিউল। তদন্তকারীরা জানান, বস্তিতে কেউ না-থাকায় রবিউল নির্বিবাদে প্রায় ৫০ মিটার লোহার তার বিছিয়ে দেয় সব ঘরের সামনে মাটির উপরে। তার পরে কেরোসিন ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় রহমতের বাড়িতে। নিজের ঘরে ফিরে একটি প্লাগ থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয় সারা বস্তিতে বিছানো লোহার তারে।

রহমতের বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখে অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসতে থাকেন বস্তিবাসীরা। নিজের ঘরের সামনে পৌঁছনোর পরে লোহার তারে পা পড়তেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান রহমত (২৮)। একই ভাবে লোহার তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুলতান আহমেদ (৪৫) এবং জাকির হোসেন (২৩)-এর। গুরুতর আহত অবস্থায় চার মহিলা এবং তিনটি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, আগুন ধরিয়ে পালানোর সময় রবিউলকে দেখে ফেলেন ওই বস্তিরই বাসিন্দা সাবিরা বিবি। রবিউল ওই মহিলাকে কেরোসিনের বোতল ছুড়ে মারে বলে অভিযোগ। এ দিন ওই বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাত জন ছাড়াও আরও ১৭-১৮ জন অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঘটনার পরেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় রবিউল। বৃহস্পতিবার সকালে বালিগঞ্জ স্টেশনে তাকে দেখতে পান এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা। তাঁরা তাকে এলাকায় ফিরিয়ে আনেন। শুরু হয় মারধর। পুলিশ গিয়ে রবিউলকে উদ্ধার করে বেহালা বিদ্যাসাগর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। রবিউলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানায় পুলিশ।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন