মাদকের জাহাজে যোগ এন্টালির

জাহাজের ওই মাদকের সঙ্গে কলকাতা তথা এন্টালি-যোগের খবর পেয়ে গুজরাত পুলিশ দ্রুত লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এন্টালিতে হানা দিয়ে ক্যাপ্টেনের ভাইকে আটক করে এসটিএফ।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ১২:২০
Share:

বাজেয়াপ্ত: গুজরাত উপকূলে জাহাজে পাওয়া মাদক। ছবি: পিটিআই।

জাহাজের নাম ‘এমভি হেনরি’। মাদক-ভর্তি জাহাজটি আসছিল ইরান থেকে। গন্তব্য ছিল মুম্বই। মাঝপথে বিপদের গন্ধ পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে সোজা গুজরাতের পোরবন্দর। জাহাজের ক্যাপ্টেন, কিছু কর্মী-সহ সেই মাদক-জালে নাম জড়িয়ে গিয়েছে কলকাতার এন্টালিবাসী এক যুবকের। রবিবার এন্টালির সেই বাসিন্দাকে আটক করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ। তারা জেনেছে, আটক যুবক ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনের ভাই।

Advertisement

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পোরবন্দরের বারদরিয়ায় নোঙর করা ‘এমভি হেনরি’ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সেই মাদক আনা হচ্ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। গ্রেফতার হয়েছেন জাহাজের ক্যাপ্টেন সুপ্রীত তিওয়ারি এবং তাঁর সঙ্গীরা। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের গুজরাত পুলিশের হাতে তুলে দেয় উপকূলরক্ষী বাহিনী।

জাহাজের ওই মাদকের সঙ্গে কলকাতা তথা এন্টালি-যোগের খবর পেয়ে গুজরাত পুলিশ দ্রুত লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এন্টালিতে হানা দিয়ে ক্যাপ্টেনের ভাইকে আটক করে এসটিএফ। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গুজরাত পুলিশের একটি দল আজ, সোমবার কলকাতায় এসে আটক যুবককে নিয়ে যাবে।

Advertisement

আমেরিকার পানামার ওই জাহাজ পণ্য নিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, জাহাজটি ইরান থেকে মালপত্র নিয়ে ভারতে আসছিল। অন্যান্য পণ্যের আড়ালে আনা হচ্ছিল প্রায় দেড় হাজার কিলোগ্রাম হেরোইন। প্রথমে পাচারকারীদের উদ্দেশ্য ছিল, মুম্বই বন্দরে সেই হেরোইন নামিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও ভাবে গোয়েন্দা তৎপরতার আঁচ পেয়ে সুপ্রীত ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ সতর্ক হয়ে যান। মুম্বই পৌঁছনোর পরে গোয়েন্দাদের পাতা জালে তাঁরা ধরা পড়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা হয় তাঁদের। তাই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত বদলে তাঁরা ঠিক করেন, গুজরাতের পোরবন্দরে হেরোইন নামানো হবে।

সতর্ক ছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরও। মুম্বই থেকে খবর পেয়ে তারা সতর্ক করে দেয় গুজরাতের উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। জাহাজটি পোরবন্দরে পৌঁছনোর আগে গভীর সমুদ্রে নোঙর করে। ‘সমুদ্র পাবক’ নামে একটি জাহাজ নিয়ে শুক্রবার সেখানে হানা দেয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। জাহাজের ভিতরে পাওয়া যায় ওই বিপুল পরিমাণ হেরোইন।

প্রাথমিক তদন্তে গুজরাত পুলিশ জেনেছে, ওই মাদক ভারতের বাজারে ঢুকিয়ে দিতে পারলে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার পাওয়ার কথা ছিল সুপ্রীত এবং তাঁর সহচরদের। এই বিষয়ে কয়েক দিন ধরে কলকাতায় ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন সুপ্রীত। গোয়েন্দারা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে সুপ্রীত তাঁর ভাইকে ভারতে কিছু জরুরি কাগজপত্র তৈরি এবং বিশেষ কিছু লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকী হেরোইন বেচে যে-অর্থ মিলবে, তার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা কোথায় রাখা হবে, ভাইয়ের সঙ্গে সেই বিষয়েও কথা হয় সুপ্রীতের। তার পরেই গুজরাত পুলিশের নজর পড়ে এন্টালির ওই যুবকের উপরে। পুলিশের সন্দেহ, হেরোইন পাচারের কথা ওই যুবক অনেক দিন ধরেই জানতেন এবং তিনি কলকাতায় বসে ঘুঁটি সাজাচ্ছিলেন। তারা যোগাযোগ করে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন