জখম: আহত জয়রাম। মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
পায়ের ছাপেই বাড়ছিল ভয়ের বৃত্তটা। সিঁটিয়ে থাকা ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রামগুলোতে লোকজন চোখ বড় বড় করে দাবি করছিলেন, এই তো উঠোনে বাঘ দেখলাম!
আর দেখাদেখি নয়, এ বার নাকি সাক্ষাৎ কামড়। আর সেই কামড় সয়ে, একেবারে বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসার দাবি করলেন গোয়ালতোড়ের কুশকাঠির বাসিন্দা জয়রাম সরেন। রবিবার বিকেলে জঙ্গলে গিয়ে বাঘের কামড়ে তাঁর বাঁ হাত জখম হয় বলে দাবি। বছর আটচল্লিশের জয়রাম মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই জয়রাম বলছিলেন, “বিকেলে কয়েকজন মিলে কাদরার জঙ্গলে গিয়েছিলাম। আচমকা সামনে বাঘটা চলে আসে। ঝাঁপিয়েও পড়ে। বাঁ হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলে কামড়ে দেয়। তারপর প্রাণপণে পালাই।”
কিন্তু বাঘের কামড় খেয়ে পালানো আদৌ সম্ভব কিনা প্রশ্ন সেখানেই। রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্ত বলছেন, “সম্ভবত কোনও হিংস্র প্রাণী কামড়েছে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরারও বক্তব্য, “হিংস্র প্রাণীর কামড়েই ওই ব্যক্তি জখম হয়েছেন।” কিন্তু সেই প্রাণী বাঘ কিনা, তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না কেউই। তবে ওই জঙ্গলে বনবিড়াল, হায়েনা, হুড়াল (হায়েনা জাতীয় প্রাণী) রয়েছে এবং তাদের কেউ হামলা চালাতেই পারে, ধারণা বন দফতরের।
মনোবিদদের মতে, কোনও বিষয় নিয়ে ভয় যখন চেপে বসে, তখন ভ্রম হতেই পারে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল সাহার কথায়, ‘‘দিকে দিকে যখন ডেঙ্গি হচ্ছিল, তখনও তো মানুষ মশা কামড়ালেই ভাবছিলেন ডেঙ্গি হল’’ আর ওই এলাকায় যেহেতু বাঘের দেখা মিলেছে বলে জানা গিয়েছে, ফলে আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক বলে জানাচ্ছেন ইন্দ্রনীলবাবু।
লালগড়, শালবনি, মেদিনীপুর গ্রামীণের বিস্তীর্ণ এলাকার পরে রবিবার সকালে গোয়ালতোড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে বলে দাবি ওঠে। প্রথমে পাথরপাড়া, কাদরার জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ দেখার দাবি করেন স্থানীয়রা। পরে নাকি নয়াবসতের জঙ্গলেও একই ছাপ দেখা যায়। আর বিকেলে এই কাণ্ড। প্রাণীটি হায়েনা বা বনবিড়াল নয়তো? জয়রামের কিন্তু এক গোঁ, “ওটা বাঘই ছিল। এত বড় ভুল হবে না।”