দেখলাম, কাদায় পড়ে রয়েছে দাদা

গোটা রাস্তা আমার হুঁশ ছিল না। কলকাতার হাসপাতালে আসার পরে জানতে পারি, দাদা মারা গিয়েছে।

Advertisement

রাজু মণ্ডল (মৃত তরুণ মণ্ডলের ভাই)

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪১
Share:

তরুণ মণ্ডল। (ইনসেটে তরুণ মণ্ডলের ভাই)

চোখ বন্ধ করলে শুধু দেখতে পাচ্ছি, চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেকগুলো শরীর। তার মধ্যে জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে পড়ে রয়েছে আমার দাদা তরুণ মণ্ডলও। অনেক ডাকাডাকি করেও দাদার সাড়াশব্দ পাইনি। এর পরে সিভিক পুলিশ আমাকে আর দাদাকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলে। গোটা রাস্তা আমার হুঁশ ছিল না। কলকাতার হাসপাতালে আসার পরে জানতে পারি, দাদা মারা গিয়েছে।

Advertisement

জন্মাষ্টমীর দিন, আমাদের পাড়া থেকে অনেকেই কচুয়ায় জল ঢালতে যায়। ঠিক হয়েছিল, এ বার আমি, বড়দা তরুণ আর দাদার এক শ্যালক জল ঢালতে যাব। সেই মতো বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসনাবাদের আমলানি গ্রামের বাড়ি থেকে বেরোই। গাড়ি ধরে বসিরহাটে আসি। সেখান থেকে জল নিয়ে হাঁটতে শুরু করি। কচুয়ায় পৌঁছই রাত ২টো নাগাদ। তখন এত ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছিল যে দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছিলাম না। তাই জল নিয়ে সকলের সঙ্গে হাঁটতে থাকি। খুবই ভিড় ছিল। কোনও মতে ঠেলে ঠেলে এগোচ্ছিলাম। এক সময়ে দেখি, বাকি দু’জনের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছি। ওদের খুঁজতে পিছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। তখনই আরও ভিড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে যাই।

লোকের পায়ের চাপে যখন কাতরাচ্ছি, তখন একজন সিভিক পুলিশ আমাকে টেনে বার করে একপাশে সরিয়ে রাখল। দেখলাম, পাঁচিলের নীচে কারও পা। কারও অর্ধেক শরীর। কাউকে বা লোকজন মাড়িয়ে চলে যাওয়ায় কাদা আর জলে শরীরটা মাখামাখি। ওই ভাবে তো আমার দাদাও পড়ে ছিল। জলকাদায় মাখামাখি হয়ে। আমার চেয়ে ছ’বছরের বড় দাদার জীবনটা এ ভাবে আমার চোখের সামনে শেষ হয়ে
গেল! কোনও মতে অন্য দিকে সরে যেতে পেরেছিল বলে দাদার শ্যালক বেঁচে গিয়েছে।

Advertisement

জানি না, বাড়ি ফিরে বৌদিকে কী বলব। দাদার দেড় বছরের ছোট মেয়েটার দিকে কী করে তাকাব!

আরও পড়ুন: কচুয়ায় লোকনাথ মন্দিরে মৃত পাঁচ, দায় কার, শুরু হয়েছে চাপান-উতোর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন