আগাম জামিন

আদালতে খারিজ, দলের দরদে না মানসের

পাশে না দাঁড়ালে বিপদ। দাঁড়ালেও বিপদ! খুনের মামলায় আদালতের একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে এমনই বিচিত্র বিভাজনের রাজনীতি ফের প্রকট হয়ে গেল প্রদেশ কংগ্রেসে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০২
Share:

পাশে না দাঁড়ালে বিপদ। দাঁড়ালেও বিপদ! খুনের মামলায় আদালতের একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে এমনই বিচিত্র বিভাজনের রাজনীতি ফের প্রকট হয়ে গেল প্রদেশ কংগ্রেসে!

Advertisement

সবংয়ে ভোটের ঠিক আগে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান মানস ভুঁইয়ার আগাম জামিনের আর্জি সোমবার খারিজ হয়ে গিয়েছে হাইকোর্টে। আদালতের সিদ্ধান্ত জানার পরেই মানসবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ এনেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

কিন্তু মানসবাবুর শিবির তাতে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, এত দিন প্রদেশ নেতৃত্ব কোথায় ছিলেন? মানসবাবুকে বিধানসভার স্পিকার পিএসি-র চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় তাঁর নিজের দল ওয়াকআউট করেছিল! অথচ বর্ষীয়ান বিধায়ককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর বিরুদ্ধে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে দল কোনও উচ্চবাচ্যই করেনি কেন? মানস-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মুখে এমন মন্তব্যও শোনা গিয়েছে, ‘‘সিপিএম প্রেমে প্রদেশ নেতারা কি এমন মগ্ন ছিলেন যে, কংগ্রেস কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর সময় পাননি?’’

Advertisement

গত এপ্রিলে সবংয়ে তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানা খুনের মামলায় মানসবাবু ও তাঁর ভাই, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া-সহ ২২ জনের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। হাইকোর্টে আগাম জমিনের আবেদন করেছিলেন ৮ অভিযুক্ত। বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া ও সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন তাঁদের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে।

মানসবাবুদের আইনজীবী শেখর বসু ও মিলন মুখোপাধ্যায় এ দিন আগাম জামিনের শুনানিতে সওয়াল করেন, তাঁদের মক্কেলেরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। মানসবাবু ও তাঁর ভাইয়ের সরকারি রক্ষী রয়েছেন। তদন্তকারী পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে রক্ষীদের বয়ান নথিভুক্ত করেনি। অভিযুক্তদের মোবাইলের টাওয়ার ‘লোকেশন’ও খতিয়ে দেখা হয়নি। অভিযুক্তদের আইনজীবীদের সওয়াল শুনে ডিভিশন বেঞ্চ মামলার কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করতে বলে। সরকারি কৌঁসুলি মনজিৎ সিংহ তা দাখিল করেন। পরে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ও তথ্যপ্রমাণ দেখে আদালত অভিযুক্তদের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করছে।

জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেন, ‘‘মানসবাবুর মতো বর্ষীয়ান ও শ্রদ্ধেয় নেতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে খুনের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’’ আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস প্রয়োজনে রাস্তায় নামবে বলেও জানিয়েছেন অধীর। একই প্রশ্নের উত্তরে মান্নান বলেছেন, জেলা কংগ্রেস জোরদার আন্দোলন শুরু করতে পারলে প্রদেশ নেতৃত্ব তাতে যোগ দিতে পারতেন। বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্যেই আরও বেশি ক্ষুণ্ণ হয়েছে মানস শিবির! তাদের বক্তব্য, জেলা কংগ্রেস সভাপতি থেকে শুরু করে সবংয়ের স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রায় সকলেই তো খুনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে চার মাস ধরে এলাকা এড়িয়ে চলছেন! বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘আদালতের নির্দেশ নিয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি। তবে রাজ্য নেতৃত্ব তো চার মাস ধরে সবই জানেন!’’

মানসবাবু নিজে এ দিন মুখ খোলেননি। আবার এ দিনই আলিপুর আদালতে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র মন্তব্য করেছেন, ‘‘মানসবাবু মান্নান-চক্রবর্তীদের (সুজন) থেকে অনেক এগিয়ে!’’ এক দিকে নিজের দলের সহানুভূতি ‘প্রত্যাখ্যান’ আর অন্য দিকে শাসক শিবির থেকে অযাচিত শংসাপত্র— সব মিলিয়ে দিল্লিতে রফা-বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টা আগে আবার সরগরম কংগ্রেস রাজনীতি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন